এক জন মাত্র ট্রাফিক সার্জেন্ট। আর তাঁর উপরেই পাঁচ নম্বর সেক্টর-সহ গোটা বিধাননগরের ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের ‘কেস’ দেওয়ার ভার। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করাটাই কার্যত রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিধাননগর ও লাগোয়া বিভিন্ন রাস্তায়।
এ বার সেই অব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে চলেছে। কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরে বিধাননগরের পুলিশ ইতিমধ্যেই পথে নামিয়েছে গ্রিন পুলিশ। চালু করা হচ্ছে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমও। আগেই বসেছিল সিগন্যাল ও নজরদারির জন্য ক্যামেরা।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বুধবার জানান, এই মুহূর্তে কোনও গাড়িকে কেস দেওয়ার আইনি অধিকারপ্রাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট রয়েছেন মাত্র এক জন। পাঁচ নম্বর সেক্টর-সহ গোটা সল্টলেকই তাঁকে দেখতে হয়। ফলে তাঁর একার পক্ষে সব সময়ে সর্বত্র সময়মতো পৌঁছনো সম্ভব হয় না। অথচ, ট্রাফিক আইন ভেঙে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি বা অটো দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করা হয়।
রাজীববাবু বলেন, “কমিশনারেটের অন্তর্গত থানা এলাকাগুলিতে বর্তমানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ গ্রিন পুলিশ সামলাচ্ছে। কিন্তু কোনও গাড়িকে কেস দেওয়ার আইনি অধিকার তাদের নেই। ফলে কেউ ট্রাফিক আইন ভাঙলে গ্রিন পুলিশ প্রথমে সেই গাড়ির নম্বর নেবে। তার পরে ট্রাফিক কন্ট্রোলে জানাবে। কন্ট্রোলে গাড়ির ডেটাবেস থেকে সেই গাড়িকে শনাক্ত করে মালিকের নামে জরিমানার নোটিস পাঠানো হবে।” এর ফলে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমবে বলে দাবি কমিশনারের।
সল্টলেকই হোক অথবা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক পাঁচ নম্বর সেক্টর, লাল আলো দেখেও গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা ট্রাফিক আইন না-মেনে যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার ঘটনা আকছার ঘটে। ভিআইপি রোডে আবার সমস্যা অন্য। ভিআইপি রোড এবং যশোহর রোডের সংযোগস্থল থেকেই গোটা ভিআইপি রোডের ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না-হওয়ায় কেষ্টপুর কিংবা ভিআইপি রোডে যানজটে অতিষ্ঠ হতে হয় যাত্রীদের। বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালিয়েও পার পেয়ে যান বহু চালক। রেষারেষির জেরে ২০০৮ সালে বাগজোলা খালে বাস পড়ে মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশের নজরদারির দিকে নজর দেওয়া হয়নি। বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে নয়টি থানা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা পাঁচশোরও কম।
ফলে এ বার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা হচ্ছে। ট্রাফিকের জন্য একটি আলাদা বিভাগ তৈরি করা হচ্ছে এক জন ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বে। ইতিমধ্যেই পাঁচ নম্বর সেক্টরে যানজট ঠেকাতে সেখানে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের সময় নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। কমিশনার জানিয়েছেন, দশটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অটোগুলিকে সুশৃঙ্খল ভাবে দাঁড় করানো হবে।
কমিশনারেট হওয়ার পরে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেওয়াকে স্বাগত জানান বিধাননগরের বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “ভাল পরিকল্পনা। ট্রাফিক পুলিশ বলেও যে কিছু আছে, তা এত দিন টেরই পাওয়া যেত না।” |