বৌবাজার থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যবসায়ী নীতীশ জয়সোয়ালের (৪৭) দেহ উদ্ধার হল সোনারপুরের একটি খালে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, খুন করা হয়েছে তাঁকে। তবে মৃতদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অনুমান, ওই ব্যবসায়ীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই সোনারপুর এলাকা থেকে নীতীশের দেহ উদ্ধার হলেও কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের সমন্বয়ের অভাবে দেহটি শনাক্ত হয় বুধবার সকালে।
রাজ্য পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাটুলির কাছে নীতীশের মানিব্যাগ পাওয়ার পরে ওই দেহটি যে তাঁরই, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয় সোনারপুর থানার পুলিশ। কিন্তু বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানানো হলেও কারা খুনের তদন্ত করবে, তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত টানাপোড়েন চলে বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতেই মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় আলিপুর মর্গে। বুধবার ভোরে নীতীশের জামাই অমিত চৌধুরীকে নিয়ে কলকাতা পুলিশের একটি দল সোনারপুর ও আলিপুরে যায়। তখনই নীতীশের পরিবার নিশ্চিত হয় যে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। বুধবার মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করা হয়। এ দিন দুপুরেই বৌবাজার থানার এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে গিয়ে নীতীশের ভাইপো দীপক সোনারপুর থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেছেন।
নীতীশ জয়সোয়াল |
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে পাটুলির একটি লেক থেকে ওই ব্যবসায়ীর মানিব্যাগটি কুড়িয়ে পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। মৃত ব্যবসায়ীর পরিবার সূত্রে খবর, সেটি স্থানীয় থানায় জমা পড়ার পরে জানা যায়, সেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স, একটি মেমরি চিপ, নীতীশের ছবি এবং কিছু কাগজপত্র ছিল। টাকা ছিল না। তখনও পর্যন্ত নীতীশের পরিবারের আশা ছিল, ওই ব্যবসায়ী অন্য কোথাও রয়েছেন। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে। যদিও তার অনেক আগেই মৃতদেহটি উদ্ধার হয়ে গিয়েছে সোনারপুর থেকে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও গোলমালে জড়িয়ে পড়েছিলেন নীতীশ। মৃত ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোনের টাওয়ারের অবস্থান পরীক্ষা করে পুলিশ ইতিমধ্যেই কয়েকটি সূত্র পেয়েছে। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে ওই ব্যবসায়ী নিউ মার্কেট থানা এলাকার একটি পানশালায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিন ব্যক্তির সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে কথা হয় তাঁর।
নীতীশের হিসাবরক্ষক পুলিশকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর সঙ্গে শেষ বারের মতো কথা হয় ওই ব্যবসায়ীর। তখন নীতীশ জানান, বিশেষ কাজে গড়িয়ায় রয়েছেন তিনি। যদিও পুলিশের অনুমান, সেই সময়ে নীতীশ নিউ মার্কেটের ওই পানশালাতেই ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ির ভিতরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। পাটুলির কাছে মানিব্যাগ ফেলে খুনিরা সম্ভবত নীতীশকে নিয়ে চলে যায় সোনারপুরে। সোমবার রাতে সোনারপুরে খেয়াদার কাছে খালের পাশে মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায় তারা।
এ দিকে, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নীতীশ না ফেরায় সোমবার রাতে বাড়ি থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু সেটি বন্ধ ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ীর ছোট মেয়ে শিবাঙ্গী। মঙ্গলবার ভোর চারটে নাগাদ বাবার মোবাইলে একটি ‘মেসেজ’ও পাঠান তিনি। সেটি ‘ডেলিভারড’ হয়েছে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন। কিন্তু দেখা যায় ফোনটি ব্যস্ত রয়েছে। ভোর সাড়ে চারটের পরে ফের বন্ধ হয়ে যায় ফোনটি।
বুধবার চাঁদনি চকে নীতীশের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা পরিবার শোকস্তব্ধ। তবে তাঁর পরিবারের কেউই কোনও কথা বলতে চাননি। বাড়িতে ওঠার সিঁড়ির মুখে একতলায় পথ আটকান নীতীশের আত্মীয়েরা। এই বাড়িরই তিনতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী মায়া এবং দুই ছেলেমেয়ে রাজ ও শিবাঙ্গীকে নিয়ে থাকতেন নীতীশ। বড় মেয়ে বন্দনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নীতীশের দাদা সতীশ থাকেন হাওড়ায়। তিনি বলেন, “নীতীশ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বাড়িতে টাকা চেয়ে কোনও ফোন আসেনি। ওর কোনও শত্রু রয়েছে বলেও শুনিনি। তবে ইদানীং ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু ঘটে থাকলে তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।”
ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, নীতীশের গলায় দড়ি বা তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তাঁর বুকে-পিঠে এলোপাথাড়ি ঘুঁষি মারা হয়েছে বলেও ধারণা পুলিশের। |