পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার জমি অধিগ্রহণের জন্য পূর্বতন বাম সরকারকে দেওয়া অগ্রিম অর্থ ফেরত চাইল ভূষণ স্টিল। সরকারি সূত্রের খবর, অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজের জন্য যে অর্থ খরচ হয়েছে, তা বাদ দিয়ে বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য শিল্প নিগম।
তবে এখনই এ রাজ্য থেকে প্রকল্প গোটাচ্ছে না সংস্থাটি। তাদের বক্তব্য, যেহেতু নতুন সরকার জমি অধিগ্রহণের বিরোধী, তাই অগ্রিম অর্থ ফেরত চাওয়া হয়েছে। অধিগ্রহণের বদলে রাজ্য সরকারের দাবি মতো সরাসরি জমি কিনে প্রকল্প গড়ার পথই পরীক্ষা করে দেখতে চাইছে তারা। তারা আশাবাদী, এ ভাবে প্রকল্প গড়া সম্ভব হবে। নথিপত্র না-দেখে অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তবে এখনও পর্যন্ত সরাসরি জমি কেনা নিয়ে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ভূষণ স্টিলের প্রকল্প নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ হাওড়ায় ওই গোষ্ঠীই আর একটি প্রকল্পের জন্য সরাসরি জমি কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। এ ছাড়া বর্ধমানেই ভূষণ স্টিল ছাড়াও ভিডিওকন ও অভিজিৎ গোষ্ঠীও ইস্পাত প্রকল্প গড়বে বলে প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রতিটি প্রকল্পের জন্যই একলপ্তে বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজন ছিল। শিল্পমহলের অভিযোগ, বড় শিল্পের জন্য সরাসরি জমি কেনার সমস্যার জেরে সেই প্রকল্পগুলিও এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
বর্ধমানের সালানপুরে লগ্নি প্রস্তাব দেওয়ার পর গোড়া থেকেই জমি জটে আটকে ছিল ভূষণ স্টিল-সহ অন্য দুটি ইস্পাত প্রকল্পও। প্রথমে ওই এলাকায় মাটির নীচে প্রচুর কয়লা রয়েছে বলে ইস্পাত প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি তোলে কোল ইন্ডিয়া। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে প্রকল্প এলাকা পুনর্বিন্যাস করে রফাসূত্র মেলে। তার পর ভূষণ স্টিলের ২,০০০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নিগমকে নির্দেশ দেয় শিল্প দফতর। ২০১০-এর শেষের দিকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলে গোটা প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
গাড়ি শিল্পের উপযোগী ইস্পাত তৈরির জন্য প্রথম পর্যায়ে সংস্থার ১৯,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করার কথা ছিল। এই প্রকল্পে জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম ইস্পাত সংস্থা সুমিতোমো মেটালেরও অংশীদার হওয়ার কথা। মূল পরিকল্পনায় ২০০৯-এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল। সে ক্ষেত্রে ২০১৪-র গোড়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সংস্থার।
সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব কপূর জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য অগ্রিম বাবদ তাঁরা পূর্বতন রাজ্যকে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। যেহেতু রাজ্য এখন আর জমি অধিগ্রহণ করবে না, তাই সেই টাকা তাঁরা নিগমের কাছে ফেরত চেয়েছেন। তবে তিনি বলেন, “আমরা এ রাজ্যে প্রকল্পটি গড়তে আগ্রহী। কারণ যে এলাকায় আমাদের প্রকল্পটি গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, সেই জমি চাষযোগ্য নয়। সরাসরি জমি কেনার জন্য সেখানকার সম্ভাব্য জমিদাতাদের সঙ্গে এক প্রস্ত কথা বলেছি। ভাল সাড়া পেয়েছি। আশা করছি মাস ছয়েকের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” তাঁর আশা, সে ক্ষেত্রে আরও ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন তাঁরা।
তাঁর দাবি, হাওড়ার জমি চাষযোগ্য হওয়ায় সমস্যা ছিল। কিন্তু সালানপুরে ওই জমিতে চাষ হয় না বলে সেখানে সরাসরি জমি কিনতে সমস্যা হবে না বলেই তাঁদের আশা। প্রসঙ্গত, ভূষণ স্টিল ছাড়াও ট্র্যাক্টর্স ইন্ডিয়া খড়্গপুরে তাদের কারখানার জন্য সরাসরি জমি কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। বিক্ষিপ্ত ভাবে পাওয়া জমিতেই নভেম্বরে কারখানার একাংশ চালু করতে বাধ্য হয় তারা। ছোট শিল্পের পক্ষে সরাসরি জমি কেনা সহজ হলেও বড় শিল্পের জন্য হাজার হাজার একর জমি কী ভাবে একলপ্তে কেনা যাবে তা নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে শিল্পমহলেই। |