হাল ফিরবে দেশের অর্থনীতির। চলতি অর্থবর্ষে না হলেও আগামী অর্থবর্ষেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৫-৮ শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে আশা করছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সাম্প্রতিক অতীতে এই প্রথম সরকারি স্তরে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করা হল। তবে শর্ত রয়েছে। তা হল, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুকূল থাকতে হবে। এই শর্ত পূরণ হলে বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন। উপদেষ্টা পরিষদের পর্যালোচনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার হবে ৭.১%। এর আগে যা ৬.৯ % দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেয় সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন (সিএসও)। তার থেকে কিছুটা ভাল ছবি আশা করছেন রঙ্গরাজন। তার কারণ কৃষি ও নির্মাণ ক্ষেত্রের পরিস্থিতির তুলনামূলক উন্নতি।
|
সি রঙ্গরাজন |
আগামী মাসে বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী কী হতে চলেছে, তা-ও স্পষ্ট এই পর্যালোচনায়। যেমন, রঙ্গরাজন জানান, রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সাপেক্ষে রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.৬%-এ বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চলতি আর্থিক বছরে সম্ভব হবে না। কিন্তু তা বলে সরে আসা চলবে না লাগাম টেনে রাখার ওই পরিকল্পনা থেকে। তাঁর দাওয়াই, এক দিকে কর আদায় বাড়াতে হবে। অন্য দিকে, ভর্তুকি কমাতে হবে ডিজেল-সহ পেট্রোপণ্য ও ইউরিয়ায়। তিনি বলেন, “অনেক দিন ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়নি। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। একটা সীমার উপর ভর্তুকি দেওয়া অসম্ভব।”
কিন্তু তেলের দাম বাড়লে কি ফের আকাশছোঁয়া হবে না মূল্যবৃদ্ধি? রঙ্গরাজনের আশ্বাস, নভেম্বর থেকেই মূল্যবৃদ্ধির হার কমছে। চলতি অর্থবর্ষ বা মার্চের শেষে তা সম্ভবত দাঁড়াবে ৬.৫%-এ। আগামী অর্থবর্ষেও তা থাকবে ৫-৬%-এর মধ্যে। তবে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষি উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা মজবুত করার উপর জোর দিতে হবে বলে মনে করিয়ে দেন তিনি। চলতি বছরে চাল ও গমের রেকর্ড উৎপাদন হবে বলেও পর্যালোচনায় দাবি। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার সময় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুরাহা দিতে উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা করের হার কমিয়েছিল কেন্দ্র। রঙ্গরাজন চান, এ বার তা ফের বাড়িয়ে ১২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হোক। যাতে কেন্দ্রের বাড়তি আয় হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির বহর কমিয়ে কয়লা, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেল পরিকাঠামোয় বেশি অর্থ বরাদ্দ করার উপর জোর দিয়েছিন তিনি। বিশেষত সামাজিক ক্ষেত্রে মনমোহন-সরকার যখন খাদ্য সুরক্ষা আইনের মতো বড় পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে, তখন ভর্তুকি কমানো ছাড়া উপায় নেই বলেই তাঁর মত।
বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশা, দেশে চড়া সুদের হার এবং কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি থমকে যাওয়ার কারণে দেশের বিনিয়োগ কমেছে। তবে জানুয়ারি মাস থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নি আসা। রঙ্গরাজনের মতে, ইউরোপ নিয়ে আশঙ্কা এখনও না-কাটলেও কিছুটা শুধরেছে মার্কিন অর্থনীতি। তাই এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখে কেন্দ্র যদি সংস্কারের পথে পদক্ষেপ করতে পারে, তা হলে বাড়বে বিনিয়োগ। আর তার হাত ধরেই ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বৃদ্ধির হারও। |