বলছেন আর এক নিহতের স্ত্রী
যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁরাই এর মর্ম বুঝবেন
‘দুঃস্বপ্নের স্মৃতি’কে আরও এক বার উস্কে দিল বুধবারের বর্ধমান। বর্ধমান উত্তরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ তা খুন হয়েছেন, এই খবর শুনে স্তম্ভিত হাসি দাস। বললেন, “ঠিক বলছেন? সিপিএমের? কখন হল?” থমকালেন। পরমুহূর্তে কেঁদে ফেললেন নানুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিহত আনন্দ দাসের স্ত্রী হাসিদেবী।
২০১০ সালের ২৯ জুনের সন্ধ্যা। নানুরের সাকুলিপুরের বাড়ি থেকে টেনে বার করে আনন্দ দাসকে পিটিয়ে-কুপিয়ে-বোমা-গুলিতে খুন করেছিল আততায়ীরা। অনেকটা যে ভাবে এ দিন সকালে বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে খুন হয়েছেন প্রদীপবাবু। তাই প্রদীপবাবুর পরিবারের প্রতি হাসিদেবীর রয়েছে পূর্ণ সহানুভূতি। রাজ্য-রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ওই খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই মাঝবয়সী হাসিদেবী বললেন, “সেই রাতটা জীবনেও ভুলতে পারব না। এখনও দুঃস্বপ্নের মতো চোখের সামনে সেই ছবি ভেসে ওঠে!”
আনন্দ দাসের স্ত্রী
হাসিদেবী। ফাইল চিত্র।
১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নানুরের বিধায়ক ছিলেন আনন্দবাবু। মৃত্যুর সময় ছিলেন জোনাল কমিটির সদস্য। এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ওই সিপিএম নেতার খুনের ঘটনায় অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকেই। ঠিক যেমন রয়েছে প্রদীপবাবু হত্যায়। এমনকী, নাম জড়িয়ে পড়ে নানুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরারও। এখনও পর্যন্ত ওই হত্যায় অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৭ জন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন কিংবা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বর্তমানে অবশ্য সকলেই জামিনে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গদাধরবাবুও রয়েছেন। সেই মামলা এখনও চলছে।
স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পরেই নানুরের সঙ্গে যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে যায় হাসিদেবীর। বর্তমানে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি বোলপুরে একটি সরকারি আবাসনে থাকেন। তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সাকুলিপুরে তাঁদের বাড়িটি। নির্বাচন উপলক্ষে বা কোনও জরুরি কাজে মাঝে মধ্যে সেখানে যান পেশায় বোলপুর ব্লক অফিসের কর্মী হাসিদেবী। বাড়ির দরজা খুলে স্বামীর ব্যবহৃত সামগ্রীর ধুলো ঝাড়েন, আর জল ঝরে চোখের। এ দিন প্রদীপ তা খুনের খবর শুনে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার পরে কিছুটা ক্ষুব্ধ শোনায় হাসিদেবীকে। বলেন, “যান, পার্টির কাছে গিয়ে খোঁজ নিন। ওই সমস্ত কথা তুলে আর কী হবে? মানুষ আমাদের ভুলেই গিয়েছে। ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে আমি আমার মতো থাকতে চাই।”
সব জানার পরে অবশ্য নিজেকে সামলাতে পারেননি। ব্লক অফিসে গায়ে জড়ানো চাদরে চোখ মুছতে মুছতে বলে ওঠেন, “যাঁদের প্রিয়জন হারিয়ে যায়, তাঁরাই একমাত্র সেই হারানোর মর্ম বুঝতে পারবেন!” এই শোকই কোথায় যেন মিলিয়ে দিয়েছে দুই জেলার দুই নিহত সিপিএম নেতার পরিবারকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.