দীর্ঘ এক বছরের উপর মিলের উৎপাদন বন্ধ। গত তিন মাস কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে রায়গঞ্জ স্পিনিং মিলের কর্মীরা। আর্থিক সঙ্কটে চিকিৎসা করাতে না পেরে মিলের এক অস্থায়ী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে রায়গঞ্জ ব্লকের শেরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবীনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছেো। মৃতের নাম সুরেশচন্দ্র রায় (৫৪)। বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মিলের চেয়ারম্যান রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “আর্থিক সঙ্কটের মুখে বিনা চিকিৎসায় সুরেশচন্দ্রবাবু মারা গিয়েছেন বলে শুনেছি। রাজ্য সরকারের কাছে মৃতের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি।” বিধায়ক জানান, মিল কর্তৃপক্ষ তুলো সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে বকেয়া ৮ কোটি টাকা না মেটানোয় তুলোর অভাবে উৎপাদন বন্ধ। কর্মীরাও তিন মাস বেতন পাচ্ছেন না। রাজ্য সরকারকে সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। ১০ বছর ধরে সুরেশচন্দ্রবাবু অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি নিয়মিত মিলে যেতেন। তাঁর বড়ছেলে জয়ন্ত দিল্লিতে দিনমজুরির কাজ করেন। তাঁর পাঠানো টাকাতেই সংসার চলছিল। ছোট ছেলে অনন্ত দৃষ্টিহীন হওয়ায় বাড়িতেই থাকেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মৃতের স্ত্রী কল্পনাদেবী বলেন, “গত ৬ মাস স্বামীর পেটে ও বুকে ব্যথা হচ্ছিল। বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানোই যাচ্ছিল না। প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার করে চিকিৎসা করাই। চিকিৎসক ইসিজি, রক্তপরীক্ষা, এক্সরে ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন। টাকার অভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। বিনা চিকিৎসায় স্বামীর মৃত্যু হল। সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।” এ দিন মৃতের বাড়িতে তাঁর পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানান সিটু ও আইএনটিইউসি প্রভাবিত মিলের বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের নেতারা। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি মিল স্বাভাবিক করার দাবিতে আন্দোলনে হুমকি দিয়েছেন সংগঠনগুলির নেতারা। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক করে কর্মীদের বেতন চালু করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” |