গ্রাম পঞ্চায়েতের একতলার খুপরি ঘরে চিকিৎসা চলছে মহিলা ও প্রসূতিদের। জায়গার অভাবে সেখানে পড়ছে দীর্ঘ লাইন। অথচ পঞ্চায়েতের সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্বিতল নিজস্ব ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ ছ’মাস ধরে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের সঙ্গে ব্লক উপ-সহকারী বাস্তুকারের মধ্যে বিবাদে সেটি তালা বন্ধ হয়ে পড়ে। চিত্রটি জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল পঞ্চায়েতের।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে পঞ্চায়েত সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হওয়ার কথা। এর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে বরাদ্দ করা হয়েছে গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা করে। এই সব সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে মহিলা ও প্রসূতিদের চিকিৎসা-সহ গ্রামবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসা হওয়ার কথা।
পাতিহাল পঞ্চায়েতের বাদেবেলিয়া গ্রামে ২০০৯ সালের গোড়ায় এই সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ হয় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা। প্রথম পর্যায়ে দেওয়া হয় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা। ২০১০ সালের মাঝামাঝি এই পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রধান পরিবর্তন হয়। তৃণমূলের প্রধানকে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসে এই দলেরই আরও একটি গোষ্ঠী। প্রধান নির্বাচিত হন কল্যাণ রায়চৌধুরী।
এ দিকে, প্রথম পর্যায়ের সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর ব্লক প্রশাসন থেকে বাকি ৪ লক্ষ টাকা তাঁকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ কল্যাণবাবুর। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে টাকা না-দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি নিজেই বাকি কাজ করার দায়িত্ব নেয়। ছ’মাস আগে কাজটি শেষ হয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী, পঞ্চায়েতের হাতে এই সদর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তুলে দেওয়া হয়নি।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নাদু বাগ বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত অনেক দিন কাজটি না করে ফেলে রেখে ছিল। তাই সমিতির পক্ষ থেকেই শেষ পর্যন্ত কাজটি করা হয়।” এর উত্তরে আবার কল্যাণবাবু বলেন, “আমাকে কাজটি করতে কোনও পয়সা দেয়নি।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অবশ্য দাবি, “কাজ হয়ে গিয়েছে। চাবি রয়েছে ব্লকের উপ-সহকারী বাস্তুকারের হাতে। প্রধান তাঁর কাছ থেকেই চাবি নিতে পারেন।” বিডিও সলমন হুসনিও বলেন, “ব্লকের উপ-সহকারী বাস্তুকারের হাতেই চাবি রয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছে প্রধানকে চাবি দিয়ে দিতে।”
প্রধান বলেন, “আমি তিন বার ব্লকে চিঠি দিয়েছি। জানিয়েছি, আমাদের হাতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু উপ-সহকারী বাস্তুকার বার বার বলছেন গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনে এসে চাবি আমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি আসেননি।” ব্লকের উপ-সহকারী বাস্তুকার কল্যাণ রুদ্র অবশ্য বলেন, “পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটিতে পঞ্চায়েত সমিতিই পরবর্তী কালে সরাসরি কাজটি করেছে। অথচ, প্রধান চিঠি দিয়ে আমাদের বলছেন কাজটি তাঁকে অন্ধকারে রেখে করা। লিখিত ভাবে তাঁর হাতে চাবি তুলে দিতে হবে। এই শর্ত আমরা মানতে চাইনি। কারণ তিনি সবই জানতেন।” উপ-সহকারী বাস্তুকারের অবশ্য দাবি, “তবে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আমরা চাবি তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছি।” সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি চাবি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন প্রধান। |