বহু দিন রোগী ভর্তি হয় না। কিন্তু ইমার্জেন্সির লাগোয়া বলে ঘরটির দরজা খোলা রাখা হয়েছে। আর সেটিই ইউনিট চালু থাকার একমাত্র ‘চিহ্ন’। মুমূর্ষু রোগী ইমার্জেন্সিতে পৌঁছনোর পরে তাঁকে স্থিতিশীল করে তোলার জন্য যে বিশেষ ইউনিট তৈরি হয়েছিল সুপার স্পেশালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে, সেটি নিজেই এখন ধুঁকছে। শয্যায় ধুলো, সরঞ্জামও খারাপ হচ্ছে একে একে।
রোগী সঙ্কটজনক অবস্থায় এলে তাঁকে ফেরানো তো যাবেই না, এমনকী কোনও ওয়ার্ডে পাঠিয়ে ইমার্জেন্সির চিকিৎসকেরাও দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না। আগে তাঁকে স্থিতিশীল করে তবে অন্যত্র পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নিয়ে একেবারে গোড়াতেই এই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যের সব চেয়ে নামী সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমেই রোগীকে স্থিতিশীল করার এই ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘সদিচ্ছা’ তাঁর পরবর্তী স্তরে কতটা প্রবাহিত হচ্ছে, তা নিয়ে। |
এসএসকেএমের সেই ইউনিট। —নিজস্ব চিত্র |
এসএসকেএমে ইমার্জেন্সি বিভাগের লাগোয়া একটি অংশে বছর দেড়েক আগে তৈরি হয়েছিল ‘রিসাসিটেশন ইউনিট’। গোড়ায় কিছু দিন সেখানে রোগী ভর্তিও হয়েছিল। কিন্তু তার পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। শেষ কবে সেখানে রোগী ভর্তি হয়েছেন, তা মনে করতে পারলেন না ইমার্জেন্সির চিকিৎসকেরাও। অথচ, ঝাঁ-চকচকে ওই ঘরে তিনটি শয্যা পাতা রয়েছে। যে হাসপাতালে প্রতিনিয়ত শয্যার অভাবে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে শয্যার এই অপচয় নিয়ে বহু বার প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
কেন এ ভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই ওয়ার্ডটি? এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কে বলেছে ইউনিটটি বন্ধ? একেবারে ভুল তথ্য।” হাসপাতাল-কর্মীরাই জানিয়েছেন, ইউনিটটি ইমার্জেন্সির লাগোয়া। ঘরটি তালাবন্ধ নয়। আর সেটিই ওই ওয়ার্ড চালু থাকার একমাত্র চিহ্ন। কিন্তু কোনও রোগী ভর্তি না-থাকার অর্থই কি একটি বিভাগের অকেজো হয়ে যাওয়া নয়? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি অধিকর্তা।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, চালু হবে কী করে? লোক দেখানোর জন্য ধার করে কনে সাজানোর মতো করে ইউনিটটি চালু হয়েছিল। উদ্বোধনের পরেই তাই তার আর কোনও অস্তিত্ব নেই। এক প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, “অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগ থেকে চেয়েচিন্তে ভেন্টিলেটর আনা হয়েছিল। সেটি ফেরত চলে গিয়েছে। তিনটি কার্ডিয়াক মনিটর ছিল। তার মধ্যে দু’টিই খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। অনেক বার বলা সত্ত্বেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন তৈরি হয়নি। ফলে উদ্যোগটিই মাঠে মারা গিয়েছে।”
সরকার গঠনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএমের উন্নয়নে যে ক’টি পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে এই ইউনিটটির পুনরুজ্জীবন ছিল অন্যতম। কিন্তু গত আট মাসেও তা করা হয়নি। কেন? তার কোনও উত্তর মেলেনি স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছেও। এ নিয়ে খোঁজখবর করা হলে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ইউনিট চালু থাকলেই তো হবে না। সেখানে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্সও থাকতে হবে। এখন সবই ‘বাড়ন্ত’।” |