নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে রাজ্যের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সর্বদল প্রতিনিধি নিয়ে দিল্লি যেতে চান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গের ৭২টি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের দায়িত্ব হলেও সেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি নেই। রাজ্য সেচ দফতর থেকে প্রতি বছর প্রকল্প জমা দিয়ে বরাদ্দের আর্জি জানাতে হয়। সেচ দফতরের অভিযোগ, বোর্ডের সদস্যরা প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গকে সামান্য কিছু বরাদ্দ দেয়। অথচ সদস্য না-থাকায় রাজ্যের পক্ষ থেকে নিজেদের দাবি পেশ করার সুযোগ নেই। দিল্লিতে দরবার করতে চান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের উত্তরবঙ্গে আসছেন। সেই সময়ে দিল্লি যাওয়ার বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নেবেন বলে গৌতমবাবু জানিয়েছেন। সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে রাজ্যের প্রতিনিধি না-থাকলে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধি ওই বোর্ডের সদস্য হলেও পশ্চিমবঙ্গের কেউ নেই। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। প্রয়োজনে সর্বদল প্রতিনিধি নিয়ে যোজনা পর্ষদ ও জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রীদের কাছে যেতে চাই।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদে শরিক কংগ্রেস ছাড়াও একজন বাম প্রতিনিধিও রয়েছেন। কংগ্রেসের তরফে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে রাজ্যের প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে দিল্লি যেতে আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। বামেদের বক্তব্য, রাজ্যের দাবি নিয়ে দিল্লিতে বিধায়কদের নিয়ে যেতে হলে বিধানসভার অনুমতি দরকার। বিধানসভায় সেই প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। সেভাবেই প্রতিনিধি দল তৈরি করা হলে তাঁদের দিল্লিতে যেতে আপত্তি নেই। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “অতীতে বহু বার এমন সর্বদল প্রতিনিধি নিয়ে দিল্লি যাওয়া হয়েছে। প্রতিবারই তৃণমূল তা বয়কট করেছে। তবে বিধানসভার অনুমতি নিয়ে যাওয়া হলে আমাদের আপত্তির কিছু নেই।” এই ব্যাপারে গৌতমবাবুর বক্তব্য, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে যাবে। সেখানে বিধানসভার অনুমতির প্রশ্নই ওঠে না। পর্ষদের ওই প্রতিনিধি দলে আমাদের সদস্যরাই থাকবেন। বাম ও কংগ্রেস সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাঁদের ইচ্ছে হলে যাবেন।” মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার জানান, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থে এই ধরনের প্রতিনিধি দলে থাকতে তাঁদের আপত্তি নেই। পাশাপাশি, দিল্লিতে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের বিরুদ্ধে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগও জানাতে চান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কোনও প্রকল্প মঞ্জুর করার অর্থ হল, বরাদ্দ টাকার ৯০ শতাংশ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। দশ শতাংশ দেবে রাজ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের দেয় অর্থের পরিমাণ ২৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। এই বৈষম্যেরও প্রতিবাদ জানাতে চান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। এ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের দশম ও একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থেকে পশ্চিমবঙ্গ ২৫ কোটি টাকা পেয়েছে। অথচ রাজ্যের তরফে ৩৬টি প্রকল্পের জন্য দাবি করা হয়েছিল ১০৭ কোটি টাকা। মঞ্জুর করা হয় মাত্র ৯টি প্রকল্প। অথচ ওই দুটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল ১১৯৪ কোটি টাকা। গৌতমবাবু বলেন, “চলতি বছরে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ বার আমরা আগামী পাঁচ বছরের জন্য ৮০০ কোটি টাকা দাবি করেছি। দিল্লিতে সেই বিষয়েও কথা বলতে চাই।” এনএইচপিসি তিস্তা নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যে কাজ করছে সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার কী কাজ হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখার ব্যাপারেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। |