নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
মীমাংসার নাম করে বধূ নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত পরিবারের কাছে টাকা চেয়ে হামলার অভিযোগে তৃণমূলের এক নেতা ও তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে শিলিগুড়ির মিলনপল্লি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের নাম অমল মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়। অমলবাবু শিলিগুড়ি টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সহ-সভাপতি।
অভিযোগকারিণীর নাম মঞ্জু শর্মা। তাঁর অভিযোগ, অমলবাবু ও তাঁর ছেলের দাবি মতো টাকা না-দেওয়ায় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দলবল নিয়ে ওই বাড়িতে তাঁরা চড়াও হন। প্রাণভয়ে মঞ্জুদেবী পালিয়ে শিলিগুড়ি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে। ধৃত তৃণমূল নেতা থানার অফিসারদের কয়েকজনকে সুন্দরবনে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও পুলিশের অভিযোগ।
|
অমল মুখোপাধ্যায় নিজস্ব চিত্র |
সোমবার ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অমলবাবুকে এ দিন সন্ধ্যায় আদালত থেকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
রাজ্যের এক মন্ত্রী, জলপাইগুড়ির এক তৃণমূল বিধায়ক ছাড়াও শহরের একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে অমলবাবুর যোগাযোগ রয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মন্ত্রী, বিধায়ক, কাউন্সিলরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি মিলনপল্লি ছাড়াও খালপাড়া এলাকাতেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা ভাবে টাকা আদায় করেন। এই ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের কাছ বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। গ্রেফতারের সময়েও তিনি শিলিগুড়ি থানার পুলিশ অফিসারদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রাজ্যের এক মন্ত্রীকে ফোন করেন বলে অভিযোগ।
এই ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “অমলবাবুর ক্ষেত্রে পুলিশ আইন মেনে ব্যবস্থা নেবে। তবে দেখতে হবে, যাতে কোনও নিরপরাধ লোক হেনস্থার শিকার না-হয়।” ওই তৃণমূল নেতার আইনজীবী অখিল বিশ্বাস দাবি করেছেন, অভিযোগকারিণীর পরিবারকে গালিগালাজ করলেও টাকা
চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “বধূ নির্যাতনের মামলা হওয়ার পরে মঞ্জুদেবী পুত্রবধূর গয়নাগাঁটি ফেরত দিচ্ছেন না। অমলবাবু সেই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলেন। টাকা চাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।”
তবে মঞ্জুদেবীর অভিযোগ, ওই ব্যক্তি তাঁর কাছে টাকা দাবি করেছিলেন। পাশাপাশি, টাকা না-দিলে মারধরের হুমকি দিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পুত্রবধূর সঙ্গে আমার ছেলের বনিবনা হচ্ছিল না। পুত্রবধূ ছেলের নামে অভিযোগ জানানোর পরে পুলিশ ছেলেকে বধূ নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার করে। পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছে।” মঞ্জুদেবীর পুত্রবধূ টুকটুকি শর্মার দাবি, তিনি ২০ হাজার টাকা ওই পরিবারকে দিয়েছিলেন। সেই টাকাই ফেরত চাইতে ওই রাতে মঞ্জুদেবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন অমলবাবু ও তাঁর ছেলে। পুলিশ টুকটুকির ওই বক্তব্যও খতিয়ে দেখছে। |