দশ লাখ টাকার লোভে গাড়িতেই ‘বন্ধু’কে খুন
বিয়ের স্বপ্ন সফল করতে মালিকের ১০ লাখ হাতিয়েছিল এক যুবক। পালাতে সাহায্য করার জন্য সে সঙ্গে নিয়েছিল তিন বন্ধুকে। সেই বন্ধুরাই তাকে গাড়ির মধ্যে খুন করে জঙ্গলে দেহ পুঁতে দিয়েছে বলে অভিযোগ। নিহত যুবকের নাম আশিস দত্ত (২৮)। তার বাড়ি শিলিগুড়ির চম্পাসারি এলাকায়। পুলিশ তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে। এক জনের বাড়ির উনুনের নীচ থেকে উদ্ধার হয়েছে পলিথিনে মোড়া সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
পুলিশ জানায়, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ‘প্রেস স্টিকার’ সাঁটানো একটি গাড়িও। ওই গাড়িটি ধৃতেরা ব্যবহার করত।
আশিস দত্ত
খুনের পরে আশিসের ‘বন্ধুরা’ প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে দেহটি গাড়িতে কী ভাবে শুইয়ে-বসিয়ে মদ-মাংস সহযোগে ফুর্তি করেছে, সেই তথ্য সোমবার সামনে এনেছে পুলিশ।
খুনের মামলায় ধৃতদের নাম হল তাহেরুল ইসলাম, জাকির আলি ও রফিকুল ইসলাম। সকলেই শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির ভক্তিনগর থানার জটিয়াকালী এলাকার বাসিন্দা। জাকিরের বিরুদ্ধে পুলিশের নথিতে একাধিক অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি থানার আইসি পিনাকী মজুমদারের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল যে ভাবে রহস্যের কিনারা করেছে তার প্রশংসা করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, “কল
রেকর্ডের সূত্রে রহস্যের কিনারা হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার সূত্রপাত ৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বেলা ১১টায় আশিস তাঁর কর্মস্থল তথা খালপাড়ার নয়াবাজারের চালের আড়ত থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যান। তার পরেই তিনি নিখোঁজ হন। ওই রাতে মালিকপক্ষ শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে দেখে বেলা ১২টা থেকে আশিসের মোবাইল বন্ধ রয়েছে।
খুনের অভিযোগে ধৃতেরা। শিলিগুড়িতে।
নিখোঁজ হওয়ার আগে যে ৫-৬টি মোবাইল নম্বরে কথা হয়েছে, সেগুলির মালিকের খোঁজে গিয়ে হতাশ হয় পুলিশ। কারণ, ওই সব নম্বর যাঁদের নামে রয়েছে, তাঁরা সকলেই দারিদ্রসীমার নীচে থাকা নির্মাণ শ্রমিক। তাঁদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম-কার্ড কেনা হয়েছে। তখনই পুলিশের সন্দেহ বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে মোবাইলের কল রেকর্ডের সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, আলিপুরদুয়ারের এক তরুণীর সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা হত আশিসের। এর পরেই নব্যেন্দু সরকার, বিশ্বজিৎ মজুমদার, মহেশ সিংহ, সুদীপ দত্ত, দীপেন্দ্র বক্সি ও সুজিত বসুকে নিয়ে দল গড়েন আইসি। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তদন্তের পরে পুলিশ জেনে যায়, প্রেমিকাকে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে পালানোর জন্য মোটা টাকা হাতিয়ে পালানোর ছক কষেছিল আশিস। কিন্তু, তিনি টাকা নিয়ে কোথায় গেলেন তা নিয়ে পুলিশ ধন্দে পড়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, নজরদারি চালানোর সুবাদে গত শনিবার স্পষ্ট হয়, আশিসের মোবাইল জটিয়াকালী এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে। জানা যায়, নানা অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্ত জাকির হোসেন ওই মোবাইল ব্যবহার করছে। পুলিশ নজরদারি বাড়িয়ে কিছুটা নিশ্চিত হওয়ার পরে রবিবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করে। জাকিরে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মাটির উনুনের অনেক গভীরে পলিথিনে মোড়া অবস্থায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা মেলে।
জটিয়াখালির বাঁশবাগানে গর্ত থেকে তোলা হচ্ছে আশিস দত্তের দেহ।
জেরার মুখে ধৃতেরা খুনের কথা কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, আশিসের সঙ্গে তাহেরুলের পুরনো আলাপ। একসময়ে তাহেরুলও ওই চালের গদিতে গাড়ি চালাত। সেই সুবাদে তাহেরুলের প্রতিবেশী জাকির, রফিকুলের সঙ্গেও ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে আশিসের। তাই টাকা নিয়ে পালানোর কাজে ওই তিন জনের ‘সাহায্য’ চায় সে। একসঙ্গে অত টাকা দেখার পরে গাড়ির মধ্যেই গলায় ফাঁস দিয়ে আশিসকে জহিরুলই খুন করে বলে পুলিশের অভিযোগ। তার পরেই সব মোবাইল বন্ধ করে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত তিস্তা ক্যানাল, বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল ও রাজগঞ্জের নানা জায়গায় ঘুরে পানভোজন করে তারা। গাড়িতে ‘প্রেস স্টিকার’ থাকায় কোথাও সেটি আটকানো হয়নি বলে পুলিশের সন্দেহ। মাঝরাতের পরে জটিয়াকালী এলাকায় একটি বাঁশবনের মধ্যে গভীর গর্ত খুঁড়ে দেহটি পুঁতে দেওয়া হয়।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.