জঙ্গলমহলে ‘প্রতিরোধ’
জেলা-লাইনের ভিন্ন সুর রাজ্য নেতৃত্বের
দীপক সরকারের নেতৃত্বাধীন জেলা সিপিএম জঙ্গলমহলে এক সময়ে যে ‘প্রতিরোধ’-এর লাইন নিয়েছিল, সে নিয়ে প্রশ্ন আগেও উঠেছে। এ বার সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বও জেলা-লাইনের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব স্পষ্ট করে দিলেন। শুধু দূরত্ব স্পষ্ট করাই নয়, রাজ্য সম্মেলনের খসড়া সাংগঠনিক-রাজনৈতিক প্রতিবেদনের ‘ভিন্ন সুর’ দীপকবাবুদের অনুসৃত ‘লাইন’কে বস্তুত খারিজ করছে বলেই মত সিপিএমেরই একাংশের।
নেতাইয়ের ঘটনাকে তৃণমূল-মাওবাদীদের ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ বলে জেলা সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেছিলেন দীপকবাবুরা। রাজ্য নেতৃত্ব কিন্তু সে পথে হাঁটেননি। ‘নেতাই’-এর সরাসরি উল্লেখ না করেও রাজ্য নেতৃত্ব বরং প্রতিবেদনে স্বীকার করেছেন, ‘এ ঘটনা ভোটের মুখে সিপিএম-বিরোধী প্রচারে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে’। সেই সঙ্গে দীপকবাবুদের লাইন নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘অধিকাংশ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ না-থাকলে যে গণপ্রতিরোধ হয় না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না’।
রাজ্য সম্মেলনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জনগণের ব্যাপকতম অংশের রাজনৈতিক, মতাদর্শগত ও সাংগঠনিক সক্রিয়তা ছাড়া যে গণপ্রতিরোধের আবশ্যিক প্রাক্-শর্ত পূরণ করতে অক্ষম সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। সন্ত্রাস মোকাবিলায় গণপ্রতিরোধের রূপ কী হবে, তা গণতান্ত্রিক অধিকার এবং পরিবেশের জন্য গণজমায়েত ও তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করে’। রাজ্য নেতৃত্বের এই পর্যালোচনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে জেলা সিপিএমের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন না পেলে যে গণপ্রতিরোধ সম্ভব নয়, এ কথা দীপকবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বারে বারে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু জেলা নেতৃত্ব সেই বক্তব্যকে গুরুত্ব দেননি।
রাজ্য সম্মেলনের প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, (বিধানসভা ভোটে) ‘জয়লাভ সহজ হবে না জেনেও বামফ্রন্টের এ ধরনের বিপর্যয় অপ্রত্যাশিতই ছিল। পরিবর্তনের পক্ষে জনগণের মনোভাব এত দৃঢ় ভাবে দানা বেঁধেছিল, এটা কোনও স্তরেই উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি। সামগ্রিক ভাবে এটা ব্যর্থতাই শুধু নয়, জনগণের এক উল্লেখযোগ্য অংশের থেকে আমাদের বিচ্ছিন্নতারও সুস্পষ্ট নজির’।
জমি অধিগ্রহণ প্রশ্নে বিরোধীদের প্রচার কৃষিজীবী জনগণের মধ্যে ‘আশঙ্কা’ তৈরি করেছিল স্বীকার করে এটাও মেনে নেওয়া হয়েছে, ‘প্রথম থেকেই যে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি ছিল, তা করা যায়নি’। পঞ্চায়েত ও পুরসভার কাজে ‘শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি-বিবর্জিত সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, কোথাও কোথাও সততা ও স্বচ্ছতার অভাব শ্রেণি-মিত্রদের মধ্যে বিভাজন’ ঘটিয়ে ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বলেও স্বীকার করা হয়েছে রাজ্য সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে। ‘নির্বাচনের মুখে প্রচারধারায় জনজীবনের সমস্যা ও দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি-বিরোধী প্রচারকে পিছনে ঠেলে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণ সামনে এসে যায়। এসে যায় তৃণমূলনেত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য। এতেও বিরুপতা বাড়ে’ বলে স্বীকার করা হয়েছে।
পরিশেষে, ‘পার্টিতে নতুন রক্ত সঞ্চালন কম হচ্ছে’ স্বীকার করে ‘অবিলম্বে এই দিকটির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন’ বলে নিদান দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.