পঞ্চায়েত ভোট এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু আসন্ন সেই ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট নিয়ে জটিলতা বেড়েই চলেছে।
দলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ মালদহ, মুশির্দাবাদের পর উত্তর দিনাজপুরেও পঞ্চায়েত ভোটে একা লড়াই করার ঘোষণা করল কংগ্রেস। রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি সোমবার বলেন, “উত্তর দিনাজপুরের প্রেক্ষিতে অনেক আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে একা লড়ার। জোটে থেকেও জেলায় তৃণমূল প্রতি পদে আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। বিধানসভা ভোটেও জেলার অনেক কেন্দ্রে তৃণমূল সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করেছে। এমনকী, সম্প্রতি ইসলামপুর কলেজ নির্বাচনে ছাত্র পরিষদকে ঠেকাতে টিএমসিপি-এসএফআই জোট হয়েছিল।”
দীপার বক্তব্য শুনে চুপ করে থাকেনি শরিক তৃণমূলও। উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য পাল্টা বলেন, “তৃণমূল কারও দয়ায় চলে না! কংগ্রেস কী বলল, তাতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমরাও জেলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী নই। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বই নেবেন।”
একই দিনে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বের উপরেই ছেড়ে রেখেছেন। জঙ্গলমহলের অন্তর্গত বাঁকুড়ার বারিকুল থানার পূর্ণাপানি ফুটবল মাঠে ভিড়ে-ঠাসা এক জনসভায় এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, “মানুষকে একজোট করেই আমরা সিপিএমকে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে হারিয়েছি। রাজ্যের মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাই আগামী পঞ্চায়েত ভোটে জোট বেঁধে লড়াই করলে সিপিএম সর্বত্র হারবে। জঙ্গলমহলে একটা পঞ্চায়েতও দখল করতে পারবে না সিপিএম!”
জনসভার শেষে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দু বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারটা রাজ্য নেতৃত্বই স্থির করবেন। দু’দলের উচ্চতর নেতৃত্ব এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” তবে শুভেন্দু বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের উপরে ছেড়ে দিলেও তাঁর বাবা, পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী এক ধাপ এগিয়ে এ দিনই সুতাহাটায় পাট্টা বিলির অনুষ্ঠানে বলেছেন, “পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের ১৯টি জেলায় তৃণমূল প্রয়োজনে একাই লড়বে।”
জোট না একলা লড়াই, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে ‘মতবিরোধ’ও রয়েছে। রবিবার মালদহের মানিকচকে দলীয় জনসভায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) পঞ্চায়েত ভোটে ‘একলা চলা’র ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ডালুবাবুর বিরোধিতা করেছেন ইংরেজবাজারের কংগ্রেস বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী।
কৃষ্ণেন্দুবাবু এ দিন বলেন, “সনিয়া গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট করেছেন। এখনও রাজ্যে সেই জোট অটুট রয়েছে। যে দিন সনিয়াজি বলবেন রাজ্যে কোনও জোট নেই, একলা চলতে হবে, সে দিন একলা চলব। জেলা কংগ্রেস সভাপতি একলা চলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? উনি বললেই কি আমাদের একলা চলার সিদ্ধান্তে সামিল হতে হবে?” |