সরকারি বিভিন্ন পরিবহণ নিগমে যত বাস রয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই খারাপ। অর্থাভাবে মেরামতিও শিকেয়। এই সঙ্কটের পরিত্রাণে এখন বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হতে চাইছে রাজ্য সরকার।
সরকারি বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার ডিপোয় ডিপোয় পড়ে থাকা বিকল বাসের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সিএসটিসি, সিটিসি, এনবিএসটিসি এবং এসবিএসটিসি চার নিগমের বাস রাস্তায় কম নামায় প্রায় অর্ধেক কর্মীর হাতে কাজও নেই। রুগ্ণ নিগমগুলোর কর্মীদের বেতনের অর্থ জোগাতেই সরকার নাজেহাল, বাস মেরামতির টাকা জুটছে না। অন্য দিকে যাত্রী ভাড়া বাড়িয়ে আয়বৃদ্ধির পথ খুলতেও সরকার নারাজ। সব মিলিয়ে বাসের অভাবে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
আর এই পরিস্থিতিতে রাজ্য এখন চাইছে অকেজো বাস মেরামত করিয়ে তা চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে ছেড়ে দিতে। সরকারের যুক্তি, এতে এক দিকে যেমন আয় বাড়বে, তেমন যাত্রীদেরও সুবিধা হবে। পরিকল্পনাটির চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে আগামী শুক্রবার মহাকরণে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে সোমবার কলকাতায় বেসরকারি বাসমালিকদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
পরিবহণমন্ত্রী এ দিন বলেন, “অনেক বাস অল্প সারাই করেই রাস্তায় নামানো যাবে। আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থাদের আহ্বান জানাব। বাস সারিয়ে তারা সরকার-নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করতে পারে।” মদনবাবুর বক্তব্য, “রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলোয় কর্মী প্রায় ১৮ হাজার। বছরে ছ’শো কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পরিত্রাণের পথ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রী ছ’মাস সময় দিয়েছেন। আমাদের কিছু একটা করতেই হবে।”
কিন্তু সরকার ‘কিছু একটা’ করতে চাইলেও সিটু জানিয়ে দিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত মানতে তারা রাজি নয়। সিটু নেতা তথা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কাসর্র্ ফেডারেশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ওই বৈঠকেই বলেন, “সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিলে আমরা বিরোধিতা করব।” তাঁর দাবি, “সামাজিক গুরুত্বের বিষয়টি অনুভব করে সরকারকে দায় নিতেই হবে।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মাঝে মাঝে বামপন্থী মুখোশ পরলেও সব সময়েই দক্ষিণপন্থী কাজ করেন। জানি না, সরকারি বাস নিয়ে ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সব কিছুকেই বেসরকারিকরণ করা এই সরকারের নীতি। সরকারি পরিবহণকেও তিনি সেই পথে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ কর্মীরা বেতন-পেনশন পাচ্ছেন না! বামপন্থীরা এর প্রতিবাদ জানাবে।” এনবিএসটিসি-র কলকাতা ডিভিশনে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণার প্রতিবাদে উল্টোডাঙা ডিপোয় এ দিন লাগাতার অবস্থান শুরু করেছেন ঠিকাদারের অধীনস্থ পরিবহণকর্মীরা।
বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিরা এ দিনের বৈঠকে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার কথা পরিবহণমন্ত্রীকে জানান। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, চালক পথ-আইন ভাঙলে জরিমানা কেন মালিক দেবেন? মালিকদের মতে, চালকের দায়বদ্ধতা ছাড়া দুর্ঘটনা রোখা অসম্ভব। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এ সব নিয়ে মহাকরণে ফের বৈঠক হবে।
এ দিন বিকেলে হাওড়া, ব্যারাকপুর, সল্টলেকের পুলিশ কমিশনার, কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের পদস্থ অফিসারদের নিয়েও বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী। পরে মদনবাবু জানান, বাসভাড়া বাড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে বিকল্প আয়ের লক্ষ্যে বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সির অর্ধেকাংশে বিজ্ঞাপন লাগানোর সুযোগ মিলবে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি মিলেছে। |