পড়াবেন কারা, প্রশ্ন সেখানেও
পঞ্চম শ্রেণিতে অলচিকি পড়ুয়াদের ভর্তি নিয়ে জট
লচিকি হরফে সাঁওতালি ভাষায় চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে তারা। কিন্তু মাস দেড়েক আগে চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডী পেরিয়েও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি বাঁকুড়ার হাজার দু’য়েক পড়ুয়া। কারণ, এ বিষয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা ছিল না। পশ্চিম মেদিনীপুর ও মুর্শিদাবাদেও একই ছবি।
অবিলম্বে ওই ছাত্রছাত্রীদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ব্যবস্থা করার দাবিতে আজ, মঙ্গলবার ভাষা দিবসে বাঁকুড়া জেলায় পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি শিক্ষার অধিকার রক্ষা মঞ্চ’। যদিও সোমবার রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন বলেন, “এ দিনই ওই পড়ুয়াদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।”
তবে এর পরেও প্রশ্ন থাকছে ভর্তি হতে পারলেও এত জন পড়ুয়াকে পড়ানোর মতো শিক্ষক কি আছেন ওই তিন জেলায়? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাস্তব হল, ওই তিন জেলার অধিকাংশ হাইস্কুলেই অলচিকি জানা শিক্ষক নেই। মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ শিবির করা হলেও এত কম দিনের জন্য হয়েছে, যে তা বাস্তবে উপকারে আসেনি শিক্ষকদের। ফলে, ছাত্রছাত্রীরা কোনও ভাবে হাইস্কুলে ভর্তি হলেও তাদের পড়াবেন কারা, সে প্রশ্ন থাকছেই।
‘আদিবাসী সমাজশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সংস্থা’ বা ‘আসেকা’র সাধারণ সম্পাদক দুখিরাম হাঁসদার দাবি, গত ২৯ ডিসেম্বর এবং ১১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষাসচিব, শিক্ষা অধিকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্য সরকারের ‘প্রতিশ্রুতি’ ছিল, ২০১৩-র ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও মুর্শিদাবাদের হাইস্কুলগুলিতে (যেখানে অলচিকি পড়ানো হবে) পাঁচ-ছ’জন বিভিন্ন বিষয়ে অলচিকি হরফ জানা শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তার আগে পর্যন্ত ওই সব পড়ুয়াকে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে। পড়াবেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরাই। দুখিরামবাবুর ক্ষোভ, “এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ এখনও দেখতে পাইনি।”
কিন্তু কেন এই সমস্যা?
বাঁকুড়ার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জেলার ৪৬টি প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রায় দুু’হাজার ছাত্রছাত্রী এ বছর অলচিকি হরফে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। জেলার মোট ১৬টি হাইস্কুলে অলচিকি হরফে পড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষা দফতরের নির্দেশ না পাওয়ায় তা এখনও চালু করা যায়নি।” জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ওই নির্দেশ না আসায় ওই দু’হাজার ছেলেমেয়ে ভর্তি হওয়ার মতো স্কুল পাচ্ছে না। অথচ, অলচিকিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠ্যবই ছাপানো হয়ে গিয়েছে। ইঁদপুরের ভাঙানালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বৈদ্যনাথ হাঁসদা বলেন, “আমার স্কুলে প্রায় ২০ জন ছাত্রছাত্রী এ বছর অলচিকি হরফে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু হাইস্কুলে তারা ভর্তি হতে পারেনি।”
মুর্শিদাবাদেও বেশ কয়েকটি স্কুলের কমপক্ষে ৫০ জন পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। পুরুলিয়ায় এখনও পর্যন্ত প্রাথমিকে অলচিকি হরফে পড়ানোই শুরু হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৩০টি প্রাথমিক স্কুলে অলচিকিতে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ পড়ুয়ারাও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি।
স্কুলশিক্ষা সচিব বলেন, “এ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে সব হাইস্কুলে অলচিকি জানা শিক্ষক আছেন, তারা যেন ওই পড়ুয়াদের ভর্তি নেয়। যে স্কুলগুলিতে নেই, সেই এলাকার পড়ুয়াদের সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক স্কুলেই (চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত যে স্কুলে পড়েছে) পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে।” ‘আসেকা’র বক্তব্য, “ওই পড়ুয়াদের মাস দেড়েক পড়াশোনার ক্ষতি হল! এর পরে শিক্ষক সংক্রান্ত সমস্যার জন্যও ওদের ক্ষতি হয় কি না, সেটাই দেখার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.