ঘাটের নিলাম না হওয়ায় ক্ষতি রাজস্বের
বার্ষিক অন্তত ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে যে ফেরিঘাট থেকে, তেহট্টের সেই ফেরিঘাট এই প্রথম নিয়মমাফিক নিলাম হচ্ছে। একটি সমবায়ের নামে নামমাত্র দামে স্থানীয় কিছু মানুষ বছরের পর বছর ওই ঘাট থেকে উপার্জন করে চলেছেন। আর রাজ্য সরকার বহু লক্ষ টাকার রাজস্ব খুইয়ে চলেছে।
তেহট্টের ফেরিঘাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। ২০০৯ সালে প্রকাশ্য কোনও নিলাম না করেই জলঙ্গি নদীর ওপর ওই ঘাট দেওয়া হয় তেহট্ট থানা ফেরিঘাট পাটনি উন্নয়ন সমবায় সমিতিকে। এখনও পর্যন্ত ওই সমবায় সমিতির হাতেই রয়েছে ওই ঘাট। ২০০৯ সালের আগে যাঁরা এই ঘাটের দায়িত্বে ছিলেন তাদের অন্যতম তেহট্টের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা বিধান বিশ্বাসের অভিযোগ, “কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের কাছ থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে নিলাম না করেই তেহট্ট-১ পঞ্চায়েত সমিতি ওই ঘাট তুলে দেয় তেহট্ট থানা ফেরিঘাট পাটনি উন্নয়ন সমবায় সমিতির হাতে। ওই সমবায় সমিতি ঘাটের জন্য যে টাকা দেয় তার থেকে অনেক বেশি টাকা আমরা দিতে চাইলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে তেহট্ট-১ পঞ্চায়েত সমিতি সেই ঘাট আমাদের দেয়নি। ২০০৯ সালের ওই ঘটনার পর থেকে আমরা বহু জায়গায় বিষয়টি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।”
বর্ষায় এখানেই চলে নৌকা। তবে পারাপারে টাকা নেওয়া হয় সারা বছর। নিজস্ব চিত্র।
ওই সমবায় সমিতির দাবি, ঘাটের নিলাম করার প্রয়োজন নেই। কারণ ঘাটে তাঁদের বংশানুক্রমিক অধিকার। সমিটির সম্পাদক দীপককুমার সরকার অবশ্য তার কোনও ব্যাখ্যা হাজির করতে পারেননি। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে ২০০৯ সালে আমরা ওই ঘাট পেয়েছি। বংশানুক্রমে আমরা পাটনি সমবায় সমিতি করে আসছি। নিয়ম হল, যে এলাকায় পাটনি উন্নয়ন সমবায় সমিতি থাকবে সেখানে ঘাট নিলাম না করেও ওই সমিতিকে দিতে হবে। কেবল তেহট্ট ফেরিঘাট নয়, চাঁদেরঘাট, কুলগাছি, কুষ্টিয়া, তারানগরের ঘাটগুলিও এই ভাবেই আমরা চালাই। কিন্তু এখন নানাভাবে আমাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে।”
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? তেহট্ট-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন পালের কাছেও তার স্পষ্ট জবাব নেই। তিনি বলেন, “২০০৯ সালে নিলাম না হলেও নিয়ম মেনেই তেহট্ট ফেরিঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয় সমবায় সমিতিকে।” কিন্তু বছর খানেক আগে ওই ঘাটের জন্য নিয়ম মেনে নিলাম ডাকা হয়। সেখানে ওই ঘাটের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১৪ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। কিন্তু নিলামে যিনি সর্বেচ্চ দাম দেন, এক বছর পরেও তাঁকে ঘাটের দখল গিতে পারেনি প্রশাসন? ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়ে তেহট্ট-২ ব্লকের বিডিও সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “আমরা এখনও ঘাটের দখল ওদের দিতে পারিনি। মোট দামের অর্ধেক টাকা ওঁরাওরা জমা দিয়েছিলেন। টাকাটা শিগগির ফেরত দেওয়া হবে।” সর্বোচ্চ এই দর দিয়ে যিনি ঘাট কিনেছিলেন সেই বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘‘টাকা দেওয়ার পরেও কেন এক বছর ধরে ঘাটের দখল পেলাম না, তার কোনও জবাব প্রশাসন দেয়নি। সেই টাকাও পঞ্চায়েত সমিতি ফেরত দেয়নি।’’ বিধানবাবুর আক্ষেপ, “সমবায় সমিতি বছরে যে টাকা সরকারকে রাজস্ব দেয় তার দ্বিগুণ রাজস্ব আমরা দিতে চাইলেও কেন সেই ঘাট আমাদের দেওয়া হচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি না। এতে তো সরকারই বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
কেন তাঁদের ফেরিঘাটের দখল না দিয়ে নতুন করে আবার নিলাম ডাকা হচ্ছে তার স্পষ্ট জবাব দুই বিডিও বা মহকুমাশাসকের কাছে মেলেনি। তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “তেহট্টের ফেরিঘাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একটা সমস্যা চলছে। জেলাশাসক সম্প্রতি পাটনি উন্নয়ন সমিতি, তেহট্টের দুই পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিধান বিশ্বাসদের নিয়ে শুনানি করে একটা কমিটি তৈরি করেছেন। জেলাশাসকের নির্দেশেই কাল, বুধবার একটি প্রকাশ্য নিলাম ডাকা হচ্ছে। সেখানে যাঁরা সর্বোচ্চ দর দেবেন তাঁরা ঘাটের দখল পাবেন।” বামফ্রন্ট আমলে হয়নি, নতুন সরকার পারে কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় মানুষ।
তবে যে ঘাট নিয়ে এত বিতর্ক সেখানে একটা সেতু তৈরি করার প্রকল্প আগেই অনুমোদন পেয়েছে। ওই সেতুটা তৈরি হয়ে গেলে ফেরিঘাট নিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান মহকুমাশাসক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.