তফাত বড় জোর ৫০ গজ। তার এক প্রান্তে ভাষা শহিদ আবুল বরকতের জন্মভিটেয় সামিয়ানা খাটিয়ে তৈরি হয়েছে মঞ। সেই মঞ্চে ইতিহাসবিদ জহর সেন ও প্রবাসী বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে সাংসদ অধীর চৌধুরী। সঙ্গে মন্ত্রী আবু হেনা-সহ কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ক।
৫০ গজের অন্য প্রান্তে আরেক মঞ্চ, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের দুই ব্যক্তিত্ব শাহজাহান শাহ ও তারিকুজ্জামানকে পাশে নিয়ে বসে রয়েছেন সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তুষার দে।
আজ, মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুপুর তিনটে থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের বাবলা গ্রামে ভাষা শহিদ আবুল বরকতের জন্মভিটেয় এ ছবি প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
বরকতের জন্মভিটেয় গড়া কংগ্রেস নিয়ন্ত্রিত ‘শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সংঘ’-এর মঞ্চ থেকে জহরবাবু ও অরবিন্দবাবু ভাষা আন্দোলন নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে আলোচনা করবেন, একই সময় মাত্র ৫০ গজ দূরে ভাষা শহিদের পৈত্রিক জমিতে সিপিএম নিয়ন্ত্রিত শহিদ আবুল বরকত কেন্দ্রের গড়া ‘বরকত ভবন’-এর মঞ্চ থেকে একই বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন শাহজাহান শাহ ও তারিকুজ্জামান। তবে কে কার ভাষণ শুনবেন? এবং কি ভাবেই বা শুনবেন?
আলোচনা ছাড়াও দু’টি মঞ্চেই রাত পর্যন্ত রয়েছে সংগীত, নাটক ও যাত্রাপালার মতো অনুষ্ঠান। সে গুলিই বা কীভাবে শ্রোতাদের কানে পৌঁছবে? স্পবষ্ট নয় কোনও পক্ষের কাছেই। ‘শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি সংঘ’ অনুষ্ঠান শুরু করে দিয়েছে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। সে দিন বরকতের জন্মভিটেয় নদিয়ার শিল্পীরা লোকসংগীত পরিবেশন করেছেন। পর দিন, সোমবার সন্ধ্যায় সেখানে বহরমপুরের নাট্যগোষ্ঠী ‘যুগাগ্নি’ মঞ্চস্থ করে সম্প্রীতির নাটক ‘হত্যারে’। রাত বারোটায় দু-পক্ষেরই সেখানে মশাল মিছিল করার কথা। দ্বৈরথ এ ভাবেই শুরু হবে।
প্রশাসনের দেওয়া সূচি অনুসারে আজ, মঙ্গলবার দুপুর তিনটেয় বরকতের জন্মভিটের মঞ্চ থেকে তালিবপুর হাইস্কুল (বরকত এই স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মাট্রিক পাশ করেন) থেকে ২০১১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকের হাতে ‘শহিদ আবুল বরকত স্মৃতি স্মারক’ তুলে দেওয়া হবে। প্রকাশ করা হবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে দুই বাংলার বিশিষ্ট লেখকদের মূল্যবান লেখায় সমৃদ্ধ ৪৩ পাতার স্মরনিকা-- ‘রক্তলেখা’।
দু’টি মঞ্চের মাঝে ওই সরকারি অনুষ্ঠানই বা কী করে হবে তাও স্পষ্ট নয়। প্রশানের এক কর্তার কথায়, “হট্টমোলার ওই দেশে কে কার কথা শুনবে?” ‘বরকত স্মৃতি সংঘ’-এর সম্পাদক সৈয়দ সিয়াদত আলি বলেন, “এ কারণে প্রশাসনের নির্দেশে ‘বরকত স্মৃতি সংঘ’-এর মাইকের চোঙার মুখ থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আর ‘বরকত কেন্দ্র’-এর মাইকের চোঙ থাকবে পূর্ব দিকে।”
তাতে কি সমস্যা মিটবে? ‘বরকত কেন্দ্র’-এর সম্পাদক তথা সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে বলেন, “চেয়েছিলাম দু’টি অনুষ্ঠানের মিলিমিশে হোক। ওরা রাজি হল না। তার ফলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
দেশ ভাগের ‘যন্ত্রণার’ মাঝে এ ভাবেই আজ ভাগ হয়ে যাচ্ছেন ভাষা শহীদও! |