দুপুর একটার ইডেন। ক্লাবহাউসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে জনা কুড়ি-পঁচিশ। চোখে-মুখে নিশ্চিন্ত ভাব । তর্ক চলছে, এত অল্প রান তুলতে আর কত ওভার লাগবে বাংলার? পঁয়ত্রিশ? চল্লিশ? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো নেমে পড়েছেন। দাদাগিরিও শুরু হল বলে।
আধঘণ্টাও গেল না, দাদাগিরি-র বদলে ইডেনে টেনশনের হিমেল স্রোত! নির্বাচকরা অবাক বিস্ময়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে। অস্থির পায়চারি করছেন কোচ রামন। বাংলা ২৩-৩! সৌরভ (১২) নেই! জয়জিৎ বোল্ড। ইনিংসের বয়স? মাত্র আট ওভার! বিজয় হাজারেতে তা হলে গোড়াতেই গণ্ডগোল?
“আরে ধুর, যারা নামল ম্যাচটা ওরাই বের করবে,” ক্লাব হাউসের দোতলায় দাঁড়িয়ে অভয় দিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রিজে অনুষ্টুপ মজুমদারের সঙ্গে সদ্য নামা ঋদ্ধিমান সাহা। এবং সম্বরণের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়ে পরের দেড় ঘণ্টায় একেবারে জোড়া বিস্ফোরণ!
|
বল মাটি ছুঁতে চাইছে না, বরং বেশি পছন্দ করছে গ্যালারিকে। চাপের মুখে বিরক্তিকর ঠুকঠুক নেই, বরং নিয়ম করে ওভারে পনেরো রান আছে! আর ঋদ্ধি-অনুষ্টুপের ঠ্যাঙানির বহর? আট ওভারে বাংলা ২৩-৩, পনেরো ওভারে স্কোর হাজির ৮০-তে। ৩৪ ওভারে ম্যাচ শেষ! বিশাল ছক্কায় সেঞ্চুরি করছেন অনুষ্টুপ। চাপকে ব্যাকফুটে ঠেলে ঋদ্ধিমান অপরাজিত ৮৫। সৌরভের লাল মার্সেডিজের মতোই এই বাংলাকে ঝকঝকে, ধারালো এবং ব্যতিক্রমী দেখাচ্ছে।
দুই ক্রিকেটারের প্রত্যাবর্তনের গল্পও তো একই রকম ব্যতিক্রমী। ঋদ্ধি-র ক্রিকেটজীবন যদি পাল্টে দিয়ে থাকে অ্যাডিলেডের ৯৪-টা মিনিট, তা হলে অনুষ্টুপকে বদলে দেওয়ার পিছনে প্রত্যাখানের দু’টো বছর।
আসলে লম্বা অস্ট্রেলিয়া সফর ঋদ্ধির টেকনিকে এনে দিয়েছে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন আত্মবিশ্বাস, যেখানে ফ্রন্টফুটে যাব না ব্যাকফুটে যাব প্রশ্নের সামনে দ্বিধার কোনও জায়গা নেই। নেই, কারণ স্কোয়ার অব দ্য উইকেট শট খেলে ব্যকফুটটা বেশ জমাট হয়ে গিয়েছে যে। বরাবর ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে আকাশে খেলতেন না। এখন অবলীলায় যাচ্ছেন ‘লফটেড শট’-এ, ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং পরিকল্পিত ভাবে। অনেকটা যেন অনার্সের ছাত্রকে উচ্চ মাধ্যমিকে বসিয়ে দেওয়ার মতো। সিডল-প্যাটিনসনকে যিনি সামলেছেন, তাঁর কাছে বসন্ত মোহান্তি আর কতটুকু পাত্তা পাবেন? মোদ্দা কথা, এই ঋদ্ধি অনেক পরিণত, আগ্রাসী। নয়তো বলবেন কেন, “বসন্ত ছাড়া ওদের কাউকে বোলার বলেই মনে হচ্ছিল না।”
আর অনুষ্টুপ? গত দু’বছর ক্লাব ক্রিকেটে ঝুড়ি-ঝুড়ি রান করেছেন। কিন্তু ডাক আসেনি। এ বারও রঞ্জিতে খেলা হত না যদি না পার্থসারথি ভট্টাচার্য ব্যর্থ হতেন। বাকিটা স্বপ্নের উড়ান। রঞ্জির শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি। দলীপে দু’টো। এ দিন আরও একটা। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ ম্যাচে চার সেঞ্চুরি! স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কী করে এমন ফর্ম সত্ত্বেও তাঁকে বসিয়ে রাখলেন নির্বাচকরা? তবে ঋদ্ধি-অনুষ্টুপের জুটি বাংলার কাছে আশীর্বাদ হলে, ছুটকো আশঙ্কাও থাকছে। প্রশ্ন, মরসুমে চূড়ান্ত ব্যর্থ অরিন্দম ঘোষকে দলে রাখা নিয়ে। প্রশ্ন, ফর্মে থাকা সৌরাশিস লাহিড়ীকে বসিয়ে রাখা নিয়েও। বিজয় হাজারের মতো লম্বা টুর্নামেন্টে এই ভুলগুলো যত তাড়াতাড়ি সামলানো যায়, ততই ভাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওড়িশা: ২১০ (৪৯.৩ ওভারে) নটরাজ ৪৬, দিন্দা ২-৪৩, ইরেশ ৩-২০, সৌরভ ১-২৫
বাংলা ২১৩-৩ (৩৪.৪ ওভারে) অনুষ্টুপ ১০০ ন:আ: ঋদ্ধি ৮৫ ন:আ:, বসন্ত ২-৩৩
|
সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বিজয় হাজারের অন্য ম্যাচে ত্রিপুরাকে (১৮০) ৮ উইকেটে হারাল অসম। |