একটি ‘নিয়ম ভাঙা’র ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ হাওড়ায়। কয়েক দিন আগে বালি সেতুতে গভীর রাতে নিয়ম ভেঙে ওঠা পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকাতে গিয়ে তৃণমূলের এক নেত্রীর হাতে সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থার এক ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্টের মার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার ফের লরিচালক এবং ট্রাফিক পুলিশকর্মীর বচসা ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল হাওড়ার বেলুড়ে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়ল জনতা। জখম হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। শেষে র্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি সামলানো হয়। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ। পুলিশ জানায়, বেলুড় বজরংবলী লোহা মার্কেটের কাছে গিরীশ ঘোষ রোডে কর্তব্যরত ছিলেন বালি ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সমরেশ দলুই এবং কনস্টেবল অনুপ জানা। তখন লোহা বোঝাই একটি লরি বজরংবলী মার্কেটে ঢুকতে যায়। হাওড়া সিটি পুলিশের নিয়ম, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোনও পণ্যবাহী লরি শহরে ঢুকতে পারবে না। তাই লরিটি নিয়ম ভাঙায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা সেটিকে আটকান। চালকের থেকে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ, এর পরে ওই চালক স্থানীয় কয়েক জন লরিচালক এবং ব্যবসায়ীকে ডাকেন। তাঁরা সেখানে জড়ো হয়ে পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে কাগজপত্রগুলি ছিনিয়ে নেন। পুলিশকে মারধরও করা হয়। ঘটনাটি শুনে সহকর্মীদের নিয়ে সেখানে যান বালি ট্রাফিক গার্ডের আইসি রিয়াজ আহমেদ খান।
রিয়াজের অভিযোগ, কাগজপত্র কে ছিনিয়ে নিয়েছে, তা জানতে চাইলে প্রায় একশো জন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লরিচালক তাঁদের ঘিরে ধরে। শুরু হয় বচসা, হাতাহাতি। পুলিশকে লক্ষ করে চলে ইটবৃষ্টিও। রিয়াজের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, তাদের লরি দিনের বেলাতেও গিরীশ ঘোষ রোড দিয়ে বজরংবলী লোহা মার্কেটে ঢুকতে দিতে হবে।
এ দিকে, গোলমালের খবর পেয়ে বালি থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে গোটা এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ভাঙচুর হয় পুলিশের একটি জিপ। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট, গুদাম। যান হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে র্যাফ নামে।
বজরংবলী মার্কেটের ব্যবসায়ী ও লরিচালকদের অভিযোগ, রিয়াজ আহমেদ খান নামে ওই আইসি-র ব্যবহার খুব খারাপ। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি চালকদের অকারণে মারধর, গালিগালাজ করেন। কখনও গাড়ির কাচও ভেঙে দেন। এ দিনও তিনি ঘটনাস্থলে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় লরিচালক প্রকাশ চৌধুরী বলেন, “আজও তিনি মারধর করেন। সবাইকে খারাপ কথা বলছিলেন। এর পরে সকলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়।” একই মত ‘লিলুয়া বজরংবলী লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মুন্না সিংহের। তিনি বলেন, “মানুষ দীর্ঘ দিন ধরেই ওই অফিসারের ব্যবহারে ক্ষিপ্ত ছিল। আজ প্রতিবাদ করেছেন। ওঁর বাজে আচরণ সম্পর্কে আগে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে মৌখিক জানানো হয়েছে।” তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রিয়াজ। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “ওই অফিসারের আচরণ নিয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ আসেনি। তা পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।” |