সম্পাদকীয় ২...
জ্ঞানচর্চার নিমিত্ত
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর গবেষণামূলক কাজ এবং তৎসংক্রান্ত অভিজ্ঞতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিবার প্রস্তাব করা হইয়াছে। বিদেশের নানা মান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই রীতি বিদ্যমান। প্রেসিডেন্সির নবায়ন যখন আন্তর্জাতিক আঙ্গিকেই করিবার কথা বলা হইয়াছিল, সেই প্রেক্ষিতে এই প্রস্তাবটি উল্লেখের দাবি রাখে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর একটি যোগ্যতামান বটেই, তাহা ফেলিয়া দিবার নহে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র হইয়া গড়িয়া উঠিতে চাহে, ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ হইয়া উঠাই যাহার প্রার্থিত লক্ষ্য, তাহার পক্ষে গবেষণার বিষয়টিও একই রকম তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, যথার্থ উৎকর্ষের কেন্দ্র কখনওই কিছু পড়ুয়ার প্রতি কিছু মৌখিক ও লিখিত ভাষণ দানে সীমাবদ্ধ নহে। তাহার লক্ষ্য, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানস্পৃহাকে উৎসাহিত করা, তাহাকে অন্য নানা দিগন্তের প্রতি ধাবমান করা। সেই কর্মটি তিনিই যথাযথ রূপে করিতে পারিবেন, যিনি স্বয়ং সেই জ্ঞানচর্চায় উৎসাহী। জ্ঞানচর্চা বলিতে নিছকই পাঠদান বুঝায় না। কিছু তথ্য জড়ো করিয়া তাহা নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণিকক্ষে আসিয়া বিতরণ করিলাম, এমন সহজিয়া ভঙ্গিটি প্রকৃত জ্ঞানচর্চার নহে। প্রেসিডেন্সির পুরাতন ইতিহাসই সাক্ষী, জ্ঞান চর্চা বলিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভিতরে একটি আদানপ্রদানের সম্পর্ক বুঝায়, যাহা শ্রেণিকক্ষ ছাড়াইয়া বাহিরেও চলিতে থাকে। যথার্থ জ্ঞানব্রতী শিক্ষকই শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করিতে পারেন। সেই সূত্রেই গবেষণার অভিজ্ঞতাটি প্রয়োজন।
জ্ঞানচর্চার বিষয়টি নিছকই আদর্শায়িত একটি ভাবনা নহে। ইহার একটি বাণিজ্যিক তাৎপর্যও বিদ্যমান। যে শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে আসিয়া অতঃপর বিদেশের বিভিন্ন মান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাইবার এবং কাজ করিবার স্বপ্ন দেখিবেন, তাঁহাকে গবেষণা বিষয়ে, তাহার পদ্ধতি ও প্রকরণ বিষয়ে সম্যক রূপে অবহিত হইতে হইবে। শুধুই পাঠ মুখস্থ করিয়া ও তাহা পরীক্ষাকেন্দ্রে উগরাইয়া নম্বর আসিতে পারে, কিন্তু তাহাতে সেই বিশ্ব-মানটি কত দূর অর্জন করা যাইবে, সেই সংশয় সঙ্গত। শিক্ষার্থী কী করিতে পারিল, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যত সেই অংশটির উপরেই জোর পড়ে। উহাই তাহার মূল্যায়নের মাপকাঠি হইয়া দাঁড়ায়। অন্য দিকে, উৎকর্ষের কেন্দ্র শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গতিকেও গণ্য করিতে চাহে। কারণ, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের গতিরেখাটিই ভবিষ্যমুখী, এবং আন্তর্জাতিক। তাই শুধুমাত্র প্রাপ্ত নম্বরের মুসাবিদা করিয়া শিক্ষার্থীর মূল্যমান নির্ধারণ করা চলিবে না। শিক্ষার্থী যদি জ্ঞান অর্জন করিতে চাহে, সেই জ্ঞানের প্রতি তাহাকে চালিত করা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য। আন্তর্জাতিক স্তরে মান্য নানা প্রতিষ্ঠান সেই জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষাটিকে, সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর গতিরেখাটিকেও যোগ্যতা বলিয়া গণ্য করে। তাই, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় তাহার নবকলেবরে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করিলে যোগ্য কাজই করিবে। বিশ্ব জুড়িয়া জ্ঞানের বাজার আর শুধু পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের উপর নির্ভরশীল নহে। সেই পরিসরে জ্ঞানচর্চাও সমধিক গুরুত্ব পাইতেছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় সেই আন্তর্জাতিক বিভঙ্গেই নিজস্ব কাঠামোটি গড়িতে উদ্যোগী হইয়াছে। রাজ্যের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও যদি এই পথ অনুসরণ করে, লাভ বই ক্ষতি হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.