দস্যু বাবার ‘দাপট’ পুঁজি,
ভোটে লড়ছেন বীর
গুলির শব্দ থেমেছে। কিন্তু লড়াই থামেনি।
বুন্দেলখণ্ডের জঙ্গল থেকে ফরমান আসত, ‘মোহড় লাগেগি হাতি পর, নেহি তো গোলি চলেগি ছাতি পর।’ দাদুয়া ডাকাতের ফতোয়া। মায়াবতীর ‘হাতি’-তে ভোট। না মানলে খতম। সোজা গুলি। নয়ত জীবন্ত আগুনে। আর বাঁচিয়ে রাখলেও উপড়ে নেবে চোখ।
তিন দশক ধরে বুন্দেলখণ্ডের জঙ্গলে এ ভাবেই রাজত্ব করে এসেছে কুখ্যাত দাদুয়া ডাকাত। লুঠ, অপহরণ, খুন। সরকারি খাতাতেই দু’শোর বেশি অপরাধ। কিন্তু গরিব গ্রামবাসীর কাছে? রবিনহুড! পুলিশ-প্রশাসন- রাজনীতিতে এমনই ‘নেটওয়ার্ক’ যে, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেও তিন দশকে নাগাল পায়নি দাদুয়ার। মধ্যপ্রদেশ লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট, বান্দায় প্রায় ১০টি বিধানসভার ভাগ্য নির্ধারণ করে এসেছে দাদুয়াই। যাঁর মাথায় দাদুয়ার হাত, ভোটে তাঁরই জয়।
কিন্তু ছবিটা বদলে গেল গত বিধানসভায়। নতুন ফরমান এল দাদুয়ার, “আবকি, সাইকেল চলেগি।” দাদুয়ার ফতোয়ায় মুলায়মের প্রার্থী জিতলেন বটে। কিন্তু লখনউয়ের গদিতে এলেন মায়াবতী। দু’মাসের মধ্যে দাদুয়াকেই খতম করল মায়ার পুলিশ।
এ বারের ভোটে আর ফতোয়া নেই। গুলির সেই শব্দ নেই। তাতে কী?
নতুন লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন দাদুয়ার ছেলে। বীর সিংহ। জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়ে লড়াই নয়, লড়ছেন সরাসরি ভোটে প্রার্থী হয়ে। আর অন্য কোনও নেতার ভাগ্য নির্ধারণ নয়, নিজেই নেতা হয়ে ভাগ্যপরীক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন বীর। দাদুয়ার মতো দেড়শো খুনের অভিযোগ না থাক, কিন্তু তোলা আদায়, খুন থেকে শুরু করে অপহরণের মোট ন’টি মামলা এখনও লটকে আছে বীর সিংহের মাথায়। ‘ডাকাত-সন্তান’-কে প্রথমে টিকিট দিতে চাননি মুলায়ম। কিন্তু দলবল
নিয়ে রীতিমতো চড়াও হয়ে ‘নেতাজি’-র থেকে বিধানসভার টিকিট আদায় করে নেন বীর। বলছেন, “এত দিন এই অঞ্চলে বাবার দয়ায় সকলে জিতেছেন। এখন আমার পালা।”
তবে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই বলেন, “ও সব অতীত! ভুলে যান। আমিও বাবাকে কখনও দেখিনি। বাবার কথা শুনেছি মাত্র। আমার বড় হয়ে ওঠা, পড়াশোনা সবই এই এলাকার বাইরে। আমি ভবিষ্যতের কথা ভাবি। এই এলাকার মানুষের উন্নয়নই আমার লক্ষ্য।”
বুন্দেলখণ্ডের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কুর্মি সম্প্রদায়ের উপরেই দাদুয়ার একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। চার দিকে রুক্ষ পাহাড়, জঙ্গল, দারিদ্র, অনুন্নয়ন, অশিক্ষা, বঞ্চনা, অত্যাচার আর ‘উচ-নিচ’ জাতপাত। গরিবের সমীহে ধনীদের লুটে-পুটে ডাকাতি-শিল্পের ফুলেফেঁপে ওঠার আদর্শ আঁতুড়ঘর। তাই বুন্দেলখণ্ডে দশকের পর দশক এত ডাকাত আর ফতোয়া-ফরমানের বাড়বাড়ন্ত। কখনও ফুলন দেবী, কখনও ঠোকিয়া, কখনও রাগিয়া, কখনও দাদুয়া। এঁদের কারও পোশাকি নাম অম্বিকা পটেল, কারও সুন্দর পটেল, আর দাদুয়ার শিবকুমার পটেল। কিন্তু প্রত্যেকের আসল পরিচয়ের জন্য ওই তিন অক্ষরই যথেষ্ট। খনি, কল-কারখানা, বিড়ি পাতার ব্যবসায়ী বা রাস্তার ঠিকাদাররা কমিশন না দিলে কাজ বন্ধ। প্রাণেরও কোনও ‘গ্যারান্টি’ নেই।
তবে গাঁয়ের লোকের কাছে বরাবরই রবিনহুডের ইমেজ দাদুয়ার। দেওখালি গ্রামের লাচ্ছি এখনও ভুলতে পারেন না, দাদুয়া না থাকলে তাঁর মেয়ের বিয়েটা হত না। “ঘরে একফোঁটা দানাপানি ছিল না। খাওয়ারই টাকা নেই, তো বিয়ে! ছেলের বাড়ি সাইকেল চেয়ে বসল। দাদুয়া দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিল। কোথা থেকে কী হল, জানি না। মেয়ে এখন খুশি আছে,” স্বস্তির নিশ্বাস লাচ্ছির। দাদুয়ার তৈরি সেই জমির ফসলকে পুঁজি করেই এ বার রাজনীতিতে হাতেখড়ি বীর সিংহের। বাবার দাপট ধরে রাখতে চান। কিন্তু আড়ালে নয়, রাজনীতিতে থেকে।
আর এখানেই সংশয় অনেকের। ‘গুন্ডারাজ’-এর জন্যই গত নির্বাচন হেরেছেন মুলায়ম। সেটাকেই প্রশ্রয় দিলে দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ঘরের লোকেরাই। সমাজবাদী পার্টিরই এক নেতার মন্তব্য, “বুঝলেন, ডাকাতি করলে নিত্যদিন পুলিশের ভয় থাকে। পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়। রাজনীতিতে এলে পুলিশও হাতে থাকে। ক্ষমতাও থাকে। প্রভাবও থাকে।” বীর সিংহের পাল্টা জবাব, “এত দিন বাবার দাক্ষিণ্যে যাঁরা রাজনীতি করে এসেছেন, তাঁরা আমাদের অগ্রগতি ভালো চোখে নিতে পারেন না। তাই এমন কথা বলছেন। কিন্তু জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মানুষের সেবা করতেই আমি রাজনীতিতে এসেছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.