ভোটের পরেও একলা চলার পক্ষে অনড় রাহুল
ত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল যা-ই হোক, ২০১৪-র লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে ‘একলা চলো’ নীতিতেই অনড় থাকতে চান রাহুল গাঁধী। যার অর্থ, ফল বেরোলে যদি দেখা যায় কংগ্রেস এ রাজ্যে নির্ণায়কের ভূমিকায়, তবু মুলায়ম বা মায়াবতীর সঙ্গে জোট গড়ে সরকারে যাওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। তবে কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে অবশ্য এ-ও বলা হচ্ছে, রাহুল ‘একলা চলো’ নীতিতে অনড় থাকতে চাইলেও রাজনীতিতে বাঁধাধরা ছকে চলা সম্ভব হয় না সব সময়। ভোটের পরে দলের অন্য বর্ষীয়ানরা কী অবস্থান নেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোট-পর্বের মাঝেই এই কৌশল-ভাবনা একেবারে অমূলক নয়। কেননা, এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষাতেই বলা হচ্ছে, বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনা, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে পারে মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। আর এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘আম ধারনা’ হল, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে জোট সরকার গড়বেন মুলায়ম। রাজনৈতিক মহলের একাংশেও সেই ধারনা ইতিমধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে।
কানপুরে নির্বাচনী প্রচারে রাহুল গাঁধী। সোমবার। ছবি: পিটিআই
কিন্তু দল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, মুলায়মের সঙ্গে হাত মেলালে উত্তরপ্রদেশে দীর্ঘমেয়াদে কী লাভ হবে কংগ্রেসের? গত তিন বছর ধরে এই রাজ্যে কংগ্রেসের হারানো জমি উদ্ধারের লক্ষ্যে পরিশ্রম করছেন রাহুল। মূলত, মুলায়মের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামিয়েই বৃদ্ধি হচ্ছে কংগ্রেসের। অন্তত গত লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে দলের ফল ভাল হওয়ার সেটাই মূল কারণ বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতারা। সেই সঙ্গে মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্কেও ভাগ বসাতে চান রাহুল। এ বারের প্রচারে তাই মায়া-মুলায়ম উভয়কেই সমান আক্রমণ করছেন তিনি। ভোটের পর তাঁদের সঙ্গেই হাত মেলালে কংগ্রেসের রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। সপা-র সঙ্গে হাত মেলালে মুলায়মের দুর্গেই বা এর পর কী ভাবে ভাঙন ধরাবে কংগ্রেস। সর্বোপরি, সপা সরকার গড়লে মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ হবেন মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী। মুলায়মের মতো তাঁর ছেলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনও অভিযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে সপা সরকারে কংগ্রেসের সমর্থন জোগানোর অর্থ হবে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে রাজনৈতিক ক্ষতি হবে কংগ্রেসের। এই সব কারণে রাহুল আগে থেকেই আম-জনতার কাছে এই বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন যে ভোটের পরেও কংগ্রেস কোনও জোটে যাবে না। মায়া-মুলায়ম উভয়কেই কাঠগড়ায় তুলে বলেছেন, “ওঁদের কারও সঙ্গে আপস করব না। সমঝোতা হবে মানুষের সঙ্গে।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোটের প্রচারে এমন কথা সবাই বলেন। ভোটের পর জোট গড়তে কিছু একটা অজুহাত খুঁজতেও দেরি হয় না। মূলত এই ধারণা দূর করতেই রাহুল সম্প্রতি ভোটের পরেও একলা চলার কথা ফের বলেছেন বিশেষ জোরের সঙ্গে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের, রাহুল যদি এই অবস্থানে অনড় থাকেন এবং কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় লোকদল জোট যদি ৭০ থেকে ১০০টি আসন পায় তবে উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির একটা ক্ষীণ সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। মায়া বা মুলায়ম একার ক্ষমতায় বা সামান্য কিছু নির্দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে পারলে সে পরিস্থিতি আসবে না। কিন্তু এই দুই আঞ্চলিক দল যদি কমবেশি ১৩০-১৪০টি আসনেই সীমিত থাকে, তখন অবশিষ্ট থাকবে দু’টি বিকল্প। হয় মুলায়ম-কংগ্রেস জোট সরকার, নয়-তো বসপা-বিজেপি জোট সরকার গঠন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ঠিক যে কারণে ভোটের পর জোট সরকার গঠনে বিরত থাকতে চান রাহুল, ঠিক সেই একই কারণে বিজেপি-ও একলাই চলতে চায়। এখনও পর্যন্ত নিতিন গডকড়ী-অরুণ জেটলিদের সেটাই অবস্থান। এবং সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
রাহুল-দিগ্বিজয় সিংহদের মতে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেসেরই। কারণ, তখন রাহুলের পরামর্শ মতো কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার উত্তরপ্রদেশের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি নেবে। তার প্রচার করে যাবেন রাহুল। তাতে লোকসভা ভোটে ও পরের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের আরও ভালো ফল হতে পারে।
এই সব সমীকরণই উল্টেপাল্টে দিতে পারে ভোটের ফল। তা ছাড়া রাহুল চাইলেও, দলের অন্য শীর্ষ নেতারা তখন তাঁর মত গ্রহণ করতে চাইবেন কি না, সেটাও দেখার। রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রেই খবর, উত্তরপ্রদেশ ভোটে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিতে চেয়েছিলেন রাহুল। কারণ তাঁর ধারনা ছিল, তাতে কংগ্রেসের ফল আরও ভালো হতে পারে। কিন্তু সেটা অতিবড় ঝুঁকি হয়ে যাবে বলে দলের প্রবীণ নেতারা তাতে বাধা দেন। ফলে কে বলতে পারে উত্তরপ্রদেশে ফল ঘোষণার পর ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কংগ্রেসের বর্ষীয়ানরা অন্য কোনও দাওয়াই দেবেন না! সুতরাং জোট না করার ব্যাপারে রাহুল অনড় মনোভাব নিয়ে চললেও, প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে ফল ঘোষণার পরেই।

রাহুলের বিরুদ্ধে এফআইআর
নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে রোড-শো করায় এফআইআর করা হল রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসনের অভিযোগ, রোড-শোয়ের জন্য নির্ধারিত সময় এবং এলাকার তোয়াক্কা না করে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি। জেলাশাসক ওম জানান, ২০ কিলোমিটার রাস্তায় দুপুর পর্যন্ত রোড-শো করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বেলা ৩টে পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে প্রচার চালান রাহুল। রাজ্য কংগ্রেস প্রধান রীতা বহুগুণার দাবি, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি। রাহুল বক্তৃতা দেননি, বা মিছিলও বের করেননি। মায়াবতীর বিরুদ্ধে রাহুলের প্রচারে বাধা দিতেই জেলা প্রশাসন এ সব করছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.