পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের সঙ্গে কলকাতার অপরাধ জগতের যোগাযোগের তথ্য ইতিমধ্যে গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। এ বার ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্তের সঙ্গে জড়িয়ে গেল টালিগঞ্জের এক অভিনেত্রীর নাম।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সেই কাদের খান আপাতত ফেরার। গোয়েন্দা-সূত্রের অনুমান, উত্তর ভারতের একটি শহরে সে গা ঢাকা দিয়ে আছে। সে যাতে দেশের বাইরে পালাতে না-পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সিকে সতর্ক করা হয়েছে।
|
কাদের। |
এবং এ হেন কাদের খানের সঙ্গেই টালিগঞ্জের অভিনেত্রী নুসরত জহানের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের কথা এ বার প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকী, তাঁদের বিয়েও পাকা হয়ে গিয়েছিল বলে টলিউড-সূত্রের খবর। ২০১০-এর এপ্রিলে মাসে দু’জনের বাগদান হয়। কাদেরের ভাই সেলিম খান বাগদানের কথা স্বীকার করেছেন। সর্বোপরি, নুসরত নিজেও জানিয়েছেন, কাদেরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, বিয়েও ঠিক হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সোমবার তাঁর মন্তব্য, “বাইরে থেকে দেখে মানুষ চেনা যায় না। কাদের ধর্ষণ করে থাকলে ওর শাস্তি হওয়াই উচিত।”
নুসরতের বাড়ি গুরুসদয় দত্ত রোডের এক গলিতে। তাঁর ও কাদেরের বন্ধুরা জানিয়েছেন, ভবানীপুরের এক কলেজে পড়তে এসে দু’জনের আলাপ। নুসরতকে কলেজে ভর্তি হতে কাদের ও তার বন্ধুরা সাহায্য করেছিল। দু’জনের আলাপ পরে প্রণয়ে গড়ায়। কাদেরের এক বন্ধু বলেন, “নুসরতের সিনেমায় নামা নিয়ে গোড়ায় কাদেরের আপত্তি ছিল। এ নিয়ে দু’জনে ঝগড়াঝাঁটিও হয়। পরে অবশ্য কাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিল।”
নুসরতের সঙ্গে কাদেরের এই ‘সম্পর্কের’ কথা সিনেমাপাড়াতেও গোপন ছিল না। এক প্রযোজকের কথায়, ‘‘সত্যি বলতে কি, কাদের আর তার বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মেলামেশার কারণেই নুসরতের থেকে আমরা কিছুটা দূরত্ব রেখে চলতাম।” প্রযোজক অশোক ধানুকা বলেন, “রবিবার সকালে মুম্বই থেকে কলকাতায় ফেরার সময়ে ওর সঙ্গে দেখা হল। জানতে পারলাম, মুম্বইয়ে কেনাকাটা করতে গিয়েছিল। বিয়ে করেছে কি না জিজ্ঞাসা করায় বলল, আগামী ছ’বছরের মধ্যে বিয়ে করব না।’’ উল্লেখ্য, ২০১১-র জুনে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শত্রু’ হল নুসরতের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ফিল্ম। ছবিটিতে নায়ক ছিলেন জিৎ।
|
|
নুসরত, সোমবার। ছবি স্টার আনন্দের সৌজন্যে। |
|
এ দিকে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে অভিযুক্তদের ‘অপরাধ সংশ্রব’ সম্পর্কে গোয়েন্দা-অনুসন্ধানে কিছু নতুন তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগকারিণীকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ব্যাপারটা মিটিয়ে
না-নিলে ‘দুবাই থেকে’ ফোন আসবে। ঘটনাচক্রে এক সাংবাদিকও সেই ফোনের কণ্ঠস্বর শোনেন। তিনিও বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। আর এরই প্রেক্ষিতে কাদের ও তার ভাই নাসিরের সঙ্গে ‘মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ড’-এর যোগাযোগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তা হলে কি ওরা অনেক বড় অপরাধচক্রে জড়িত?
তদন্তকারী সূত্রের বক্তব্য: ধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্ত রুমান-নাসির-কাদেরের সঙ্গে কলকাতার অপরাধ জগতের মাখামাখির কিছু তথ্য পুলিশের কাছে আছে। শেক্সপিয়র সরণি-ভবানীপুর-বেনিয়াপুকুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, কলকাতা বন্দর এলাকার ছোটখাটো মাফিয়া থেকে শুরু করে হাওড়ার বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গেও তাদের ওঠাবসা ছিল। তবে কোনও ‘মুম্বই গ্যাং’-এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “ছেলেগুলোর বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যে কথা বলে ভয় দেখানো ও ঠগবাজির নালিশ আছে।” |