ঐক্যের বার্তা দিতে মঞ্চ মহাকরণ
মমতাকে তোপ সূর্যের, সঙ্গী কংগ্রেসও
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের প্রাথমিক মন্তব্য সরকার-বিরোধী ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ তুলে দিয়েছিল সিপিএমের হাতে। সোমবার সেই অস্ত্র আরও ‘ধারালো’ করে দিল সরকারই! মহাকরণে দুই আইপিএস অফিসারের প্রেস বিবৃতি দেওয়া সংক্রান্ত ঘটনায়। সোমবার আরও সুর চড়িয়েছে সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে জোটশরিক কংগ্রেসেরও একাংশ। ঘটনাচক্রে, তাঁরা সকলেই মহিলা এবং ‘ঘোষিত ভাবেই’ মমতা-বিরোধী। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিপিএম এ দিন সরাসরি বলেছে, কোনও ‘আত্মমর্যাদাসম্পন্ন’ অফিসার এ রাজ্যে কাজ করতে পারবেন না। আর কংগ্রেসের তিন নেত্রী দীপা দাশমুন্সি, মৌসম বেনজির নূর এবং মালা রায় দাবি করেছেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। তাঁরা পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার ইস্তফাও দাবি করেছেন।
মহাকরণে দুই আইপিএস অফিসারের প্রেস বিবৃতি সম্পর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, “যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, সেই পুলিশ অফিসারদের দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে বিবৃতি দেওয়ালেন, তাতে অপরাধীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।” তিনি কি পুলিশ কমিশনারের ইস্তফা দাবি করছেন? সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমি কারও ইস্তফা দাবি করছি না। তবে আমাদের সময়ে রিজওয়ানুরের মৃত্যু নিয়ে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল। তার পর পুলিশ কমিশনার কিছু মন্তব্য করেছিলেন। তখন কিন্তু তাঁকে সরতে হয়েছিল। তবে এই পুলিশ কমিশনার কী করবেন? তাঁকে ধমক দিয়ে বলা হয়েছিল, আমাদের মুখে কালি লেগেছে। মুছিয়ে দিন! তিনি সে কাজ করেছিলেন।” একই সঙ্গে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “এর পর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কেউ এখানে কাজ করতে পারবেন না!” শিলিগুড়িতে রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, “যে ভাবে কলকাতা পুলিশের দুই কর্তা বিবৃতি দিলেন, তাতে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের বিবৃতি দিতে হয়েছে।”
মহাকরণ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।
‘রাজনৈতিক’ কারণেই পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ‘বিভেদ’ সৃষ্টি করতে আপাতত ‘তৎপর’ সিপিএম। দময়ন্তী সেন ও জাভেদ শামিমের এ দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্যবাবু বলেন, “ওঁরা কী করবেন! চাকরি করছেন। মুখ্যমন্ত্রী যা বলতে বলবেন, তাই ওঁদের বলতে হবে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সব ব্যাপারে ষড়যন্ত্র দেখেন। এ ক্ষেত্রেও প্রথমে তাই দেখেছিলেন। পুলিশ কমিশনার তাই বলেছিলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই এ কাজ করা হয়েছে।” পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, সব পুলিশই সমান নয়, “পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যেও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অনেকে আছেন। যাঁরা ন্যায়ের পথে চলেন। সত্য কথা বলেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে কাজ করেন না।”
এ দিন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের দফতরের সামনে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পচনন্দার ইস্তফা দাবি করে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা বলেন, “রিজওয়ানুর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় ওই বিবৃতি দেওয়ার জন্য অবিলম্বে পচনন্দাকেও সরাতে হবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিও দুঃখজনক। ধর্ষিতা মহিলার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে তাঁকে।” দীপার আশঙ্কা, “দময়ন্তীর সাহসিকতার জন্য তাঁকে না আবার সরিয়ে দেওয়া হয়।”
কংগ্রেস সাংসদ মৌসমও মালদহে বলেন, “ঘটনার পর ভাল করে খোঁজখবর না-করে মন্তব্য করাটা মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক হয়নি। নিজে মহিলা হয়ে বুঝতে পারছি, প্রথমে কী অন্যায় করেছিল পুলিশ। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে অপরাধীরা সকলে এত দিনে ধরা পড়ে যেত। আমরা চাই, দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিক।”
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বিবৃতি দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে বলে দাবি তুলল দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস। একই সঙ্গে তাদের দাবি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে পদত্যাগ করতে হবে।
পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা নিয়ে এ দিন বিড়লা তারামণ্ডল থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল করে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস। মিছিল শেষে জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মালাদেবী বলেন, “তদন্ত শেষের আগেই মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনার দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি দিয়েছিলেন। সত্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। পুলিশ কমিশনারের ওই বক্তব্যের পর তো আসল ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যেতে পারত। আমরা ওঁর ইস্তফা দাবি করছি।”
এ দিন দময়ন্তী-জাভেদকে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, সিপিএম নেতা সূর্যবাবু অবশ্য তা জানেন না। তবে তাঁর মতে, “যখন যেমন সুবিধা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তেমন কথা বলেন। কখনও বলেন, আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু আইন যাতে আইনের পথে না-চলতে পারে, পুলিশ কমিশনারকে তো সে কথাই বলেছিলেন! ফলে পুলিশ কমিশনার তাঁর দায়িত্ব পালন না-করে সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন।”
মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই আক্ষেপ করেন, রাজ্যে আইএএস, আইপিএস, চিকিৎসক নেই। সে কথা উল্লেখ করে সূর্যবাবু বলেন, “যাঁরা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আইএএস, আইপিএস, চিকিৎসক, শিক্ষক, তাঁরা এ রাজ্যে থাকবেন কেন? রাজ্য ছেড়ে চলে যাবেন! মুখ্যমন্ত্রী মুখে বলেন, পুলিশ স্বাধীন ভাবে চলবে। কিন্তু কেমন স্বাধীন ভাবে চলছে, তা তো রাজ্যের মানুষ দেখতে পাচ্ছেন!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.