তিস্তার জলে যথেষ্ট ঘোলা হয়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সেই আবহেই দু’দেশের মধ্যে আসন্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পর্যায়ের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বিএসএফ জওয়ানদের ভূমিকা নিয়ে কড়া অবস্থান তুলতে চলেছে ঢাকা। দু’দেশের সম্পর্ককে ইতিবাচক রাখতে চেয়েও নয়াদিল্লি এর কূটনৈতিক মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহারা খাতুন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে গত ২৪ নভেম্বর যে সব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল, সেগুলি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঢাকার বক্তব্যে সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে চলেছে সীমান্তের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা। অভিযোগ, গত মাসে রানিনগরে বিএসএফ জওয়ানরা এক বাংলাদেশিকে পাচারকারী সন্দেহে নগ্ন করে মারধর করেছে। ওই ঘটনার একটি ভিজিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রবল চাপের মুখে পড়ে সে দেশের সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান বিরোধী বিএনপি-র নেত্রী খালেদা জিয়া বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নেমেছেন। হাসিনা সরকারের ‘অপদার্থতা’ এবং ভারত বিরোধিতাকে মুখ্য বিষয় করে আন্দোলনের ডাক দিতে আগামী কাল একটি জনসভারও আয়োজন করেছে বিএনপি।
এই অবস্থায় আসন্ন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত রিপোর্ট চাইবেন সহারা খাতুন। জানতে চাইবেন, ‘ক্ষত মেরামতে’র ব্যাপারে ভারত কোনও পদক্ষেপ করছে কিনা। ঘরোয়া ভাবে ভারতকে এ কথাও জানানো হবে যে, এই ঘটনার ফলে অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে হাসিনার সরকারকে। সীমান্ত এলাকায় দু’দেশের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করার জন্য কী ভাবে এগোনো যায়, সে ব্যাপারেও পরামর্শ চাইবে ঢাকা।
নয়াদিল্লি অবশ্য এ ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেবে বলেই কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক যখনই গড়ে ওঠে, তখনই তা ভেস্তে দেওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশ করা ও ছড়ানোর প্রশ্নে পাক গুপ্তচরসংস্থা আইএসআই-এর হাত রয়েছে বলেই মনে করছে নর্থ ব্লক। বিএসএফ সূত্রের দাবি, জওয়ানদের হাতে প্রহৃত ওই ব্যক্তি পাচারকারী। তিনি বেআইনি ভাবে সীমান্ত পার হওয়ার সময়ই সমস্যার সূত্রপাত। যার জেরে বিষয়টি মারধর পর্যন্ত গড়ায়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলবে নয়াদিল্লি। ভারতের বক্তব্য, সীমান্ত নিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য আরও বেশি করে খুলে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর্থ-সামাজিক কারণে চোরাপাচারের মতো ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে হিংসাও। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ সীমান্তে যে ভাবে সীমান্ত-হাট খোলা হয়েছে, তাকে মডেল করে এই ধরনের হাটের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে বাংলাদেশকে বোঝাবে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এর ফলে দু’পক্ষেরই সীমান্ত দুর্নীতির মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। |