অবৈধ খাদানে মাটি ধসে চাপা পড়ল পাঁচ মেয়ে
বৈধ খাদান এলাকায় কয়লা কুড়োতে গিয়ে জখম হল পাঁচ বালিকা। সোমবার সকালে জামুড়িয়ার তপসি প্যাচ এলাকার ঘটনা। জখমদের প্রথমে স্থানীয় বাহাদুরপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। পরে এক জনকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ দিকে, এই ঘটনায় ফের অবৈধ কয়লা চুরির রমরমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জখম বালিকাদের বাড়ি তপসি স্টেশন পাড়ায়। তাদের বয়স সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে। জখমদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালে কয়লা কুড়োনোর জন্য এক সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোয় পাঁচ জন। সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রতিবেশীদের থেকে বাড়ির লোকজন খবর পান, তপসি প্যাচ সংলগ্ন অবৈধ খাদান এলাকায় মাটি চাপা পড়েছে তারা। আশপাশের বাসিন্দারা কিছু ক্ষণের মধ্যে তাদের উদ্ধার করে বাহাদুরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠান। পরে সেখান থেকে বছর দশেকের এক বালিকাকে আসানসোলে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, একটি কুয়ো খাদের গা ঘেঁষে সুড়ঙ্গের মতো গর্ত। ওই এলাকায় দু’ফুট খুঁড়লেই কয়লা মেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গর্তে ঢুকে রড জাতীয় কিছু দিয়ে মাটি সরিয়ে কয়লা বেছে নিয়ে যায় অনেকে। এ দিন তেমন ভাবেই কয়লা সংগ্রহের সময়ে মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় ওই পাঁচ জন চাপা পড়ে যায়।
এই ঘটনার পরে এলাকায় অবৈধ খনন নিয়েও সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বেআইনি খাদান বন্ধ রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও তা ঠিক নয়। জামুড়িয়ার কেন্দা ফাঁড়ি এলাকায় সিঙ্গারন, দোপরানা-সহ নানা জায়গায় রমরমিয়ে অবৈধ কয়লার কারবার চলছে। দিন কয়েক আগেই কুলটিতে অবৈধ কয়লা মজুত রাখার অভিযোগে পুলিশ দু’টি ইটভাটার মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে মোট পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এ দিন তপসির ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরেই একটি ইটভাটায় বেশ কিছু কয়লা মজুত রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। পুলিশের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি। সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত বলেন, “ইটাভাটায় কয়লা মজুত রাখার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। পুলিশ কমিশনারেটের উচিত, বৈধ কয়লার কতটা আছে, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া। আশা করি তাহলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
অবৈধ খননের জেরে নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারি বিপন্ন, এ কথা জানিয়ে ইসিএল সেখানে খোলামুখ খনি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই সংস্থার দাবি, ওই কোলিয়ারি সংলগ্ন বীজপুর, কাঁটাগোড়িয়া এলাকায় অবৈধ খননের ফলে ভূগর্ভে কাজ করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, প্রথমে কুয়োর মতো গর্ত করে প্রায় ৮০ ফুট গভীর পর্যন্ত কয়লা কাটছে দুষ্কৃতীরা। তার পরে দেওয়াল বরাবর সুড়ঙ্গ কেটে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “দীর্ঘ দিন অবৈধ খননের জেরে ওই খনিগর্ভে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ নয়। যখন-তখন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই খোলামুখ খনি করার পরিকল্পনা হয়েছে।”
শ্রমিক সংগঠনগুলির সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানান, ইসিএল এই সিদ্ধান্ত শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়নি। তাই ইসিএলের দাবি তাঁরা মানতে নারাজ। তথ্য-সহ যদি ইসিএল দাবি প্রমাণ করতে না পারলে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন বলেও জানান তিনি।
আসানসোলের এসিপি (সেন্ট্রাল) সুনীল যাদব বলেন, “ইসিএল এই ঘটনা নিয়ে কোনও অভিযোগ করেনি। তা করলে তদন্ত হবে। অবৈধ কয়লা ধরা পড়লে আটক করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.