পুরস্কার এবং তিরস্কার। আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাকে (এনবিএসটিসি) ঘুরে দাঁড়াতে কর্মীদের জন্য এমনই নীতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবার থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে সঠিকভাবে কাজ করে সংস্থার যাঁরা আয় বাড়াবেন তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। উল্টো হলে তিরস্কার। মঙ্গলবার বিকালে সংস্থার শিলিগুড়ি ডিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা করেন সংস্থার নবনিযুক্ত ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এমডি) সি মুরুগণ। তিনি বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে সরকার ভর্তুকি পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কর্মীদের আয় বাড়িয়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে। আর পুরস্কার আর তিরস্কার নীতি চালু করে দিয়েছি। আরও কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সমস্ত কাজের টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হবে। কর্মীদের বলেছি, কোথাও কোনও দুর্নীতি, অভিযোগ উঠলে সরাসরি আমাকে জানাতে।” |
সি মুরুগন এনবিএসটিসি কর্মীদের পুরস্কৃত করছেন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
তবে গত দেড় মাসে অধিকাংশ কর্মী ভাল কাজ করায় আয় বাড়ছে বলে এমডি জানিয়েছেন। এদিন শিলিগুড়ি ডিভিশনের চালক এবং কন্ডাক্টর মিলিয়ে ১০ কর্মীকে ভাল কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে শিলিগুড়ি ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তম গণ জানিয়েছেন। এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, বর্তমানে সংস্থার ১০০ টাকা আয়ের ৩৪ টাকাই তেল বাবদ খরচ হচ্ছে। এটাই কমাতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কিলোমিটার প্রতি আয় ১৬টা থেকে বেড়ে ১৯ টাকা হয়েছে। প্রতিদিনের আয় ১৬ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ২১ লক্ষ্যে পৌঁছেছে। তার পরেও গত আড়াই মাস ধরে ৩৬০০ উপর কর্মীর বেতন এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন, অবসরকালীন ভাতা দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। এমডি বলেন, “আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। নতুন বাস, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষেবা বাড়িয়ে আয় বাড়াতে হবে। কর্মীদের বেতন, পেনশন-সহ সমস্ত কিছুর সংস্থান নিজেদেরই করতে হবে। কর্মী, অফিসারদের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।” এমডি জানিয়েছেন, নতুন কতগুলি প্রশাসনিক সংস্কার করা হচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্ত জিনিস কেনা হবে। সদর দফতরে আলাদা সেল আগামী মাসের মধ্যে তৈরি হবে যাবে। ১২টি নতুন বাস কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে রাজ্য পরিবহণ দফতর কিনে সংস্থায় দিচ্ছে। ১১৫ টি পুরানো, ভাঙা বাস বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকা দিয়ে নতুন বাস কেনা হচ্ছে। এ ছাড়া ছোট মাপের মেরামতির কাজ ‘জব কন্ট্রাক্ট’ সিস্টেমের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে করা হলেও বড়মাপের সমস্ত মেরামতির কাজ এক জায়গায় করা হবে। রাজ্য সরকার পাঁচটি পরিবহণ সংস্থাকে নিয়ে দুটি পরিবহণ সংস্থা তৈরির পরিকল্পনাও নিয়েছে। সেখানে এনবিএসটিসিকে যাতে কোনও সংস্থার সঙ্গে মিশে যেতে না হয় তা কর্মীদের মাথায় রাখতে হবে। সংস্থা সূত্রের খবর, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও বাম আমলে নিয়োগকরা ঠিকাদার সংস্থার কর্মী এবং অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করা হয়েছে। পাঁচটি ডিপোকে ভাগ করে জুড়ে ছোট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চালকদের এক দফায় ৪৫০ কিলোমিটার গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটু, আইএনটিইউসি-র মত শ্রমিক সংগঠনগুলি এই ধরণের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছেন। এডি বলেন, “আমরা সবাই একটা পরিবার। সংস্থা বাঁচলে সবাই পরিবার নিয়ে ভালভাবে থাকবেন। সংস্থার দেনার পরিমাণ বর্তমানে ২০০ কোটি টাকা এখনও রয়েছে। সবই কর্মীদের মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। নইলে তিরস্কার, বদলি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।” |