মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে এলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার দুপুরে মেডিক্যালে এসে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডও ঘুরে দেখেন তিনি। কথা বলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের সঙ্গে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জানান রোগীরা। নিজেদের অসুবিধার কথা জানান হাসপাতাল কর্মীরাও।
মেডিক্যাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “পরিকাঠামোগত ঘাটতি রয়েছে। সেই সব ঘাটতিগুলি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। তবে এই পরিস্থিতিতেও কাজ করতে হবে। কাজের সঙ্গে সমঝোতা করা চলবে না।” চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্মীদের সময়মতো কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ ওঠে। এখানে যে সব পরিষেবা পাওয়ার কথা, সেগুলিও সব সময়ে পাওয়া যায় না। এখনও ডায়ালিসিস চালু হয়নি। ক’দিন আগে শিশুমৃত্যুর ঘটনা নিয়েও শোরগোল পড়েছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে শিশুবিভাগ ঢেলে সাজার উদ্যোগ নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সদ্যোজাতদের জন্য একটি ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু, এ কাজে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। হাসাপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতি অবশ্য বলেন, “খুব শীঘ্রই এই ইউনিট চালু হবে।”
|
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে মঙ্গলবারই প্রথম মেদিনীপুরে এলেন চন্দ্রিমাদেবী। মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেই শুরুতে তিনি স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্তারা। পরে ওয়ার্ড পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। একে একে আইসিইউ, শিশু-ওয়ার্ড, মেল মেডিক্যাল, ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন। কথা বলেন রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনেদের সঙ্গে। এসএনসিইউ-র কাজ কতদূর এগিয়েছে, কী কী কাজ বাকি রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিমন্ত্রীকে জানান, নানা অসুবিধার মধ্যেই এখানে কাজ করতে হয়। পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। শিশু-ওয়ার্ডে মাত্র ৪৫টি শয্যা রয়েছে। অথচ, ৮০-৮৫ জন শিশু ভর্তি থাকে। মঙ্গলবারই যেমন ১১০ জন শিশু ভর্তি ছিল।
শুধু রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনই নন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নিজেদের অসুবিধার কথা জানান হাসপাতাল কর্মীরাও। তাঁদের বক্তব্য, মাঝেমধ্যেই লিফট অচল হয়ে পড়ে। ফলে, রোগীরা সমস্যায় পড়েন। জরুরি বিভাগ থেকে নতুন ভবনে যাওয়ার রাস্তা খারাপ। ছাউনিও নেই। অনেক সময়ে রোগীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলিও পাওয়া যায় না। এ সব শুনে চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “ধীরে ধীরে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।” ওয়ার্ড ঘুরে দেখার পর ফের মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে বিভাগীয় প্রধান-রা উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসকেরাও তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য, “নীতির অভাবে গত ৩৪ বছরে বহু ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এক দিনে এই সব ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তবে, ধীরে ধীরে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।” তাঁর কথায়, “ব্লক স্তরে পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এর ফলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপরে ‘চাপ’ কমবে। তখন এখানে আরও ভাল পরিষেবা পাওয়া যাবে।” চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “আপাতত কী কী প্রয়োজন, ঘাটতিগুলি কী ভাবে মেটানো যায়, এ সব নিয়ে আলোচনা করতেই এখানে এসেছিলাম। ফিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেব।” হাসপাতালের বেশ কিছু ঘর ব্যবহার না-হয়েই পড়ে রয়েছে। এই সব ঘরগুলি কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, বৈঠকে সে নিয়েও আলোচনা হয়। |