খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ‘ট্রমা ইউনিট’ তৈরির কাজ সেই বিশ বাঁও জলেই। ট্রমা ইউনিট তৈরির জন্য সেই ২০০৯-এ দেড় কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকায় একটি ভবন তৈরির পাশাপাশি গুটিকয় যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে! তিন বছরে অগ্রগতি সে-টুকুই!
আর কিছুই করে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। এমনকী কবে ইউনিটের পরিকাঠামো তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হবে, সে নিয়েও নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারছেন না জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা খড়্গপুরের বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। তিনি বলেন, “রেলশহরের হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। তা সত্ত্বেও কেন পরিকাঠামো তৈরিতে এত ঢিলেমি, বুঝতে পারছি না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইব।” খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবাশিস পাল বলেন, “আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আয়ত্তের মধ্যে যে সমস্ত কাজ ছিল, তা শেষ হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার বাকি অর্থ মঞ্জুর করলে অন্যান্য কাজ করা যাবে।”
খড়্গপুর শহরের দু’দিক দিয়ে গিয়েছে দু’টি জাতীয় সড়ক (৬ নম্বর ও ৬০ নম্বর)। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশনও এই শহরে। হাওড়া, টাটা, আদ্রা, ভুবনেশ্বরের দিকে গিয়েছে চার-চারটি প্রধান রেললাইন। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনায় আহতদের আপৎকালীন উন্নত স্বাস্থ্য-পরিষেবা দিতেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০০৯ সালে এ জন্য দেড় কোটি টাকাও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাতেই ট্রমা ইউনিটের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নিয়ে বলা ছিল। |
যেখানে আইটিইউ, সিটি স্ক্যান ইউনিট, ইসিজি-র ব্যবস্থা, উন্নতমানের এক্সরে মেশিন থাকবে। থাকবেন ৩ জন সাধারণ সার্জেন, ৩ জন অর্থোপেডিক সার্জেন, ৩ জন অ্যানেসথেসিস্ট, ৪ জন সাধারণ মেডিক্যাল অফিসার, ২৫ জন স্টাফ-নার্স, ১৩ জন জিডিএ, ৪ জন টেকনিশিয়ান, ২ জন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও ১৩ জন সুইপার। অথচ, এখনও পর্যন্ত মাত্র এক জন মেডিক্যাল অফিসার ও এক জন অ্যানেসথেসিস্ট নিয়োগ হয়েছে। তাঁরা আপাতত মহকুমা হাসপাতালেই কর্মরত। আর কেনা হয়েছে অপারেশন টেবিল, অস্ত্রোপচারের টুকিটাকি সরঞ্জাম, আলমারি, শয্যা ইত্যাদি। দেড় কোটি টাকার মধ্যেই ভবন-নির্মাণ ও সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। হাতে এখনও ২৪ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। যা দিয়ে একটি একটি এক্সরে মেশিন ও অর্থোপেডিক বিভাগের সি-আর্ম যন্ত্র কেনার কথা। ওই পরিমাণ অর্থ খরচ করার অনুমোদন নেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। তাই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকেই কিনতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব যন্ত্র কেনার উদ্যোগ চলছে।
কিন্তু এই সামান্য সরঞ্জাম দিয়ে তো ট্রমা ইউনিট চালানো সম্ভব নয়। তার পর কী হবে? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকি সরঞ্জাম কেনার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগের ব্যাপারেও জানানো হয়েছে। তবে এই জানানো এবং তার তদ্বিরের পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য ও কেন্দ্র--দুই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে যে এক জন মাত্র চিকিৎসক ও অ্যানেসথেসিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার অর্থ বরাদ্দ করেনি। কী ভাবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবেসে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে, আপাতত সুদের টাকায় বেতন দিতে বলা হয়েছে! যেহেতু দেড় কোটি টাকা দীর্ঘদিন পড়েছিল, তাই আগে বেতনের সমস্যা তেমন হয়নি। কিন্তু গোটা ব্যবস্থাটাই তো অ্যাডহক, ‘আপাতত’। ভবিষ্যৎ স্পষ্ট নয়। এখন কেন্দ্রীয় বরাদ্দের মাত্র ২৪ লক্ষ টাকা রয়েছে। তাতে সুদের টাকা কত কী হবে, কত দিনই বা এ ভাবে বেতন দেওয়া যাবেসে নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। বহু-প্রতীক্ষিত ‘ট্রমা ইউনিট’ কবে চালু হবেপুরো প্রকল্প ঘিরেই ধোঁয়াশা।
ক্ষুব্ধ রাজ্যে ক্ষমতাসীন জোটের প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞানসিংহ-ও। তিনি বলেন, “এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ করব। আর দেরি বরদাস্ত করব না।” |