|
|
|
|
নয়াচর প্রকল্পে সময় বেঁধে দিল রাজ্য |
‘সেজ’ না করেও ইনফোসিসকে কর ছাড়ের ভাবনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস চাইলে তাদের প্রকল্পের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা দিতে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে রাজি রাজ্য সরকার। তবে কখনওই ওই প্রকল্পকে ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ (সেজ)-এর মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করবে না রাজ্য। মঙ্গলবার মহাকরণে এ কথা জানান রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বাম আমলে ২০১০-এ নিউটাউনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প তৈরির জন্য ইনফোসিসকে জমি দিয়েছিল হিডকো। জমির পরিমাণ ৫০ একর। দাম ঠিক হয় ৭৫ কোটি টাকা। এর পর প্রায় দীর্ঘ ধরে এক বছর ওই জমি পরেই ছিল। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৈরি হওয়ার পরে সম্প্রতি পুরো দাম মিটিয়ে জমি হাতে নিয়েছে ইনফোসিস। কিন্তু প্রকল্প নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দিন কয়েক আগে রাজ্যে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ইনফোসিসের প্রাণপুরুষ এন আর নারায়ণমূর্তি জানান, রাজ্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করে কি না, তা দেখার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। মহাকরণ সূত্রের খবর, দিন দুই আগে হিডকোকে চিঠি দিয়ে ইনফোসিস জানিয়েছে, তারা ‘সেজ’-এর মর্যাদা পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু সেটা পেতে গেলে রাজ্য সরকারের সম্মতির প্রয়োজন।
আর এই ‘সম্মতি’ দিতেই আপত্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের। ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছিল, তারা ‘সেজ’-এর বিরুদ্ধে। পার্থবাবু সে কথাই মনে করিয়ে দিয়ে এ দিন বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে বদ্ধপরিকর। নীতিগত ভাবে আমরা ‘সেজ’-এর বিরুদ্ধে।”
কিন্তু ইনফোসিস তো ‘সেজ’-এর মর্যাদা চেয়েছে? পাল্টা প্রশ্ন তুলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “ওরা সেজ চায়, না প্রকল্প গড়ার সুযোগ-সুবিধা চায়?” তাঁর কথায়, “ইনফোসিস জানাক, তারা কী সুবিধা চায়। আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দেব। তবে এটা বলা যায়, ইনফোসিসকে যে কোনও রকম সাহায্য করতে রাজ্য প্রস্তুত। কারণ, আমরা চাই প্রকল্পটা হোক।”
কিন্তু ‘সেজ’-এর মর্যাদা চাওয়ার প্রধান কারণ হল বিভিন্ন কর ছাড়ের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া, যা একান্তই কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। পার্থবাবু বলেন, “ওই প্রকল্পের জন্য ইনফোসিস যাতে কর ছাড়ের সুবিধা পায়, তার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলবে রাজ্য।” শিল্পমন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার, ‘সেজ’-এর তকমা সরিয়ে রেখে ইনফোসিসের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী তাঁরা। কিন্তু ‘সেজ’-এর মর্যাদা পেলে কোনও প্রকল্প যে কর ছাড়ের সুবিধা পায়, ‘সেজ’ না হলে শুধু মাত্র রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে সেই ছাড় পাওয়া সম্ভব কি না, শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে এ দিন সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।
এর মধ্যেই ইউনিভার্সাল সাকসেস সংস্থার নয়াচর প্রকল্পের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিল রাজ্য সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্পতালুক এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প তৈরি করার জন্য রাজ্যের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ওই সংস্থার। সেই চুক্তিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে মহাকরণের খবর। গত সোমবারই নয়াচর প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় প্রসূনবাবুর।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য পরিবেশ-সহ যে সব সরকারি দফতরের ছাড়পত্র প্রয়োজন, আগামী ছ’মাসের মধ্যে তা জোগাড় করার জন্য প্রসূনবাবুকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, যে কোনও একটি প্রকল্পের কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে তাঁকে। প্রসূনবাবু জানিয়েছেন, নয়াচর দ্বীপে বেশ কিছু মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন হিসেবে মৎস্যজীবী গ্রাম তৈরি করা হবে। সেই কাজ তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যাবে। |
|
|
|
|
|