আপত্তি দলের একাংশেই
সূর্য, রেজ্জাকের ‘পদোন্নতি’র উদ্যোগ সিপিএমে
লের একাংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে পলিটব্যুরোয় এবং ‘চাষির ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লাকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে সিপিএমে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অসুস্থতা অব্যাহত। সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা সম্মেলনে গেলেও পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিতে পাঁচ-ছয় দিনের জন্য কোঝিকোড় যেতে তিনি রাজি নন। ঘনিষ্ঠ মহলে বুদ্ধবাবু সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সূর্যকান্তবাবুকে পলিটব্যুরোর সদস্য করার জন্য সিপিএম নেতাদের একাংশ জোর চেষ্টা শুরু করেছেন। আগামী ৪-৯ এপ্রিল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। সেখানেই নতুন পলিটব্যুরো গঠিত হবে। বর্তমানে এ রাজ্য থেকে বুদ্ধবাবু ছাড়াও রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন পলিটব্যুরোর সদস্য। এ ছাড়া, সিটুর পক্ষ থেকে এ রাজ্যেরই মহম্মদ আমিন পলিটব্যুরোতে রয়েছেন। তবে বয়সের কারণে আমিন এ বার পলিটব্যুরো থেকে ‘অব্যাহতি’ পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ, বুধবার থেকে কলকাতা জেলা পার্টি অফিস প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ২৩তম রাজ্য সম্মেলন। সম্মেলনের শেষে গঠিত হবে রাজ্য কমিটি। আলিমুদ্দিনের নেতারা পার্টি কংগ্রেস থেকে ফেরার পরে গঠিত হবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। তখন ১৯৭২ সাল থেকে এক টানা বিধায়ক রেজ্জাককে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়ার কথা ভাবছেন বিমানবাবুরা। রাজ্য সম্মেলন চলাকালীনই সূর্য-রেজ্জাকের ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের সঙ্গে বিমানবাবুদের আলোচনা হবে বলে সিপিএম সূত্রে খবর।
বিরোধী নেতা হিসেবে সূর্যবাবুর ভূমিকায় আলিমুদ্দিন খুশি। দলের রাজ্য নেতারা বলছেন, সংযত ভাষায় যে ভাবে প্রতিদিন তিনি বিরোধীদের আক্রমণ করছেন, কৃষকের আত্মহত্যা-সহ বিভিন্ন ঘটনায় দৌড়ে যাচ্ছেন, সেটা প্রশংসনীয়। এই পরিস্থিতিতে সূর্যবাবু পলিটব্যুরোয় গেলে দলের লাভ। সিপিএমের এই অংশের আরও বক্তব্য, বুদ্ধবাবু যদি নিয়মিত কেন্দ্রীয় কমিটি বা পলিটব্যুরোর বৈঠকে যোগ দিতেন, তা হলে সূর্যবাবুর কথা এখনই উঠত না। তা ছাড়া, নিরুপমবাবুও শরীর খুব ভাল নয়। ফলে সূর্যবাবুকে পলিটব্যুরোর সদস্য করার বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বুদ্ধবাবু যদি পার্টি কংগ্রেসে না যান, তা হলে সূর্যবাবুর দাবি আরও জোরদার হবে বলেই দলের ওই অংশের মত।
সূর্যবাবু এবং রেজ্জাক দু’জনেই কৃষকসভার রাজ্য নেতা। যদিও তাঁদের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ নিয়ে দলের অন্দরেই নানা কথা চালু আছে। বিরোধী দলনেতার বিভিন্ন কার্যকলাপে রেজ্জাক নানা সময়ে অপমানিত বোধ করেছেন। আলিমুদ্দিনের নেতাদের কাছে এ নিয়ে ক্ষোভও ব্যক্ত করেছেন রেজ্জাক। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নিয়ে তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত করার কথা ভাবছেন দলের একাংশ। ঠিক যে ভাবে ২০০৮-এ কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসের পরে সুভাষ চক্রবর্তীকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আসা সুভাষবাবু তার পর আর প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করেননি। দলের রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, রেজ্জাককে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হলে তাঁরও ‘মুখ বন্ধ’ হবে।
রেজ্জাকের পক্ষে দলের নেতাদের যুক্তি, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর কাণ্ডের পরেই তাঁকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধ-নিরুপমের বিরোধিতায় নেওয়া যায়নি। এখন নেওয়া হলে বাঙালি মুসলিমদের (যাঁদের বড় অংশ কৃষক) ভাল বার্তা দেওয়া যাবে। সংগঠনে আরও ‘সক্রিয়’ ভাবে পাওয়া যাবে রেজ্জাককে। তাঁর অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো যাবে। ভোটে হারার পরে বুদ্ধ-নিরুপম দু’জনেই এখন কট্টর রেজ্জাক-বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। ফলে তাঁরাও বিরোধিতা করবেন না বলেই দলীয় সূত্রে খবর।
তবে, সূর্যবাবু এবং রেজ্জাক পদোন্নতির বিষয়টি যে খুব মসৃণ হবে, এমনটা মনে করছেন না দলের একাংশই। কারণ, বুদ্ধ-বিমান-নিরুপম যদিও বা ‘সম্মতি’ দেন, কেন্দ্রীয় কমিটি তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্য গৌতম দেব এবং মদন ঘোষ আপত্তি তুলতে পারেন বলে তাঁদের ধারণা। সিপিএমের অন্যতম প্রধান লবি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক গৌতমবাবু। অন্য দিকে, কৃষকসভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ বর্ধমান লবির প্রতিনিধিত্ব করেন। দু’জনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে আপত্তির যে কারণ শোনা যাচ্ছে, তা প্রায় এক।
সূর্যবাবুর ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে পলিটব্যুরোর সদস্য হন। সুতরাং সূর্যবাবুর ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ার প্রয়োজন কী? কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেই তিনি দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। গৌতমবাবু মনে করেন, অসুস্থ হলেও দলে বুদ্ধবাবুর কোনও বিকল্প নেই।
রেজ্জাকের ক্ষেত্রে তাঁদের মত রাজ্য জুড়ে সুভাষ চক্রবর্তীর যে জনপ্রিয়তা ছিল, রেজ্জাকের তা নেই। তা ছাড়া, বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পরে তো বটেই, অন্য সময়েও দলীয় নেতৃত্বের প্রতি প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করে তিনি কেবল দলের শৃঙ্খলাই ভাঙেননি, দলের ভাবমূর্তির ক্ষতিও করেছেন। আরও বলা হচ্ছে, এমনিতেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে কৃষক ফ্রন্ট থেকে চার জন সূর্যবাবু, মদনবাবু, দীপক সরকার ও মুর্শিদাবাদের নৃপেন চৌধুরী রয়েছেন। আরও এক জনকে নেওয়ার প্রয়োজন কী?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.