|
|
|
|
|
ভুল থেকে শিক্ষা নেব,
আগাম বললেন বিমান
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
|
|
রাজ্য সম্মেলনে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে জেনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু আগাম বলে রাখলেন, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে তাঁরা শিক্ষা নিতে চান!
বিগত বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনা থেকে আরম্ভ করে পঞ্চায়েত ও পুরসভার কাজ, নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা, আত্মম্ভরিতা, আচরণ নানা বিষয়েই রাজ্য সম্মেলনে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলে আন্দাজ করছে আলিমুদ্দিন। পরিস্থিতি বুঝে সম্মেলন শুরুর ঠিক আগের দিন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিমানবাবু বলেছেন, “রাজ্য সম্মেলনে বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্যের পাশাপাশি ত্রুটি-বিচ্যুতির কথাও আসবে। খোলামেলা আলোচনা করে অতীতের ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই।” দল ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্মসূচি রূপায়ণে নেতৃত্ব যে ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন, সে কথাও তুলে ধরেন বিমানবাবু। সম্মেলনের ঠিক আগে রাজ্য সম্পাদকের এ ভাবে ত্রুটি স্বীকার ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছে দলের একাংশ।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বিরোধী কংগ্রেস ও তৃণমূলের বড় অভিযোগ ছিল, গরিবদের সরকারি অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘দলীয় আনুগত্য’ দেখা। বিশেষত, বন্যা বা খরার সময়। গত তিনটি নির্বাচনে গরিবের বড় অংশ বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই বিমানবাবু এ দিন বলেন, “রাজনৈতিক আনুগত্য দেখে আমরা গরিবকে বিভেদ করতে চাই না। বরং, আগামী দিনে আনুগত্য-বিহীন ভাবে শহর ও গ্রামের গরিব মানুষকে সংগঠিত করতে চাই।” দলের নেতাদের একাংশের কার্যকলাপ যে মানুষ ভাল ভাবে নেননি, আলিমুদ্দিন তা জানে। বিমানবাবু বলেন, “সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষ যা পছন্দ করেন না, আমরা তার থেকে দূরে থাকতে চাই। আগামী দিনে সে কথায় মাথায় রাখতে হবে।”
প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আজ, বুধবার থেকে সিপিএমের ২৩তম রাজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে। বিমানবাবু রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে এটি দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলন। ইতিমধ্যে জেলা সম্মেলনগুলিতে বিমানবাবু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেনের মতো পলিটব্যুরোর সদস্যদের উপস্থিতিতেই প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। সেই ধারাই যে রাজ্য সম্মেলনে অব্যাহত থাকবে, আলিমুদ্দিন তা বুঝতে পারছে। বিমানবাবুর কথায়, “জেলা সম্মেলনগুলিতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আত্মসমালোচনাও হয়েছে। তার নিরিখেই রাজ্য সম্মেলনেও আলোচনা হবে। আমাদের
জনসংযোগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। যে ধরনের জনসংযোগ কমিউনিস্টদের থাকা দরকার, তাতে খামতি ছিল।”
বিমানবাবু স্বীকার করেন, ২০০৬ সালের বামফ্রন্ট সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি এবং ২০০৮ সালের রাজ্য সম্মেলনের ঘোষণা রূপায়ণেও দল অনেকাংশেই ব্যর্থ। তাঁর বক্তব্য, “সরকার পরিচালনা, স্বাশাসিত সংস্থা বা স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের ঘোষিত কর্মসূচি রূপায়ণে ত্রুটি-বিচ্যুতি জেলা সম্মেলনগুলিতে উঠে আসে। রাজ্য সম্মেলনে তা নিয়েও আলোচনা হবে।” আর এ ভাবে আত্মসমালোচনার মধ্যে দিয়েই দলকে মতাদর্শের উপরে দাঁড় করিয়ে তাঁরা যে আগামী দিনে কর্মসূচি রূপায়ণ করতে চান, তা-ও জানান বিমানবাবু। কোন লক্ষ্যে এ বারের রাজ্য সম্মেলন? বিমানবাবু বলেন, “কাজের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি মুক্ত, মতাদর্শে পুষ্ট পার্টিকে পুনর্গঠিত করতে চাই। নিষ্ক্রিয়তা থেকে মুক্ত হয়ে দল পরিচালনা করতে চাই।” বিমানবাবুর কথায় ইঙ্গিত, যে ভাবে দল চলছে, তাতে পরিবর্তন না-আনতে পারলে আগামী দিনে সিপিএমের ভবিষ্যৎ খুব ভাল নয়।
কেবল আত্মসমালোচনাই নয়, যে ভাবে তৃণমূল জোট সরকার চলছে, সম্মেলনে সে কথাও উঠে আসবে বলে বিমানবাবু জানান। ফসলের দাম না-পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা, শাসক দলের সন্ত্রাস, পরিবহণ কর্মীদের বেতন-সমস্যা, বিভিন্ন উৎসবের পিছনে বহু অর্থ ব্যয় এ সব প্রসঙ্গও সম্মেলনে আলোচনা হবে। বিমানবাবুর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার অগ্রাধিকারের তালিকা পরিবর্তন করে উৎসবের পিছনে অকারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে!”
সম্মেলন উপলক্ষে সভাগৃহ ও মঞ্চের নামকরণ হয়েছে যথাক্রমে জ্যোতি বসু ও হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের নামে। রাস্তায় রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, দেবব্রত বিশ্বাস, বেগম সুফিয়া কামাল, বিনয় চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ বা সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। মূল বাড়ি কিন্তু সাজানো হয়েছে কার্ল মার্ক্স, লেনিন, স্তালিন, মাও-এর ছবি ও বাণী দিয়েই। পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে সীতারাম ইয়েচুরি, এস আর পিল্লাই, বৃন্দা কারাট প্রমুখের রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা। |
|
|
|
|
|