টিম ইন্ডিয়ার ০-৮ বিপর্যয়ের কারণ তল্লাশিতে ভারতীয় বোর্ড সময় নিল আড়াই মিনিট!
সোমবার চেন্নাইয়ের পার্ক শেরাটন হোটেলে সচিনদের ভরাডুবি নিয়ে বলতে উঠে বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন জানান, টিম খারাপ খেলেছে ঠিকই কিন্তু এখনই এ সব নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা ঠিক হবে না। ওয়ান ডে সিরিজ শেষ হলে নাহয় বসা যাবে।
উপস্থিত সদস্যদের এক জনও বলেননি, টেস্ট সিরিজ বিপর্যয় নিয়ে কেন আজও কথা বলা হবে না? তাঁরা বরঞ্চ জানতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন যে, সহারাকে শেষ পর্যন্ত কী চোখে দেখা হবে? কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, নিম্বাসের সঙ্গে যে টিভি চুক্তি বাতিল হয়ে গেল সেই টাকাটা বোর্ড কী করে পাবে? মোট আলোচনার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি কেটে যায় স্রেফ অর্থকরী বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে। প্রেসিডেন্ট যখন বলেন, জো ডস-কে তাঁরা বোলিং কোচ করছেন তখন পশ্চিমাঞ্চলের কোনও কোনও কর্তা তাজ্জব হয়ে যান। সদস্যদের বলা হয় টিম ডস-কে চাইছে। ঘটনা হচ্ছে, কোচ ডানকান ফ্লেচারই মূলত ডস-কে চেয়েছেন। বিদায়ী বোলিং কোচ এরিক সিমন্স গ্যারি কার্স্টেন জমানায় এসেছিলেন। কার্স্টেন চলে যাওয়ার পরেও সিমন্স পড়ে ছিলেন এই আশায় যে তাঁকেই কোচ করা হবে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু অপমানিত হয়েই তাঁকে চলে যেতে হচ্ছে। |
সভা থেকে বেরিয়ে অনেকে গজগজ করতে থাকেন, “এই জো ডস না কী, এই লোকটা একটাও টেস্ট ম্যাচ খেলেনি। ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। যেখানে আগামী দু’বছর মুখ্যত উপমহাদেশের উইকেটে খেলা হবে, সেখানে এ রকম এক জনকে বোলিং কোচ করে আনার ব্যাখ্যা কী? সে তো উপমহাদেশের জন্য জরুরি লাইন-লেংথের কিছুই জানে না! বোলারদের কী সাহায্য করবে!” পরে এ সব আলোচনা করলে কী হবে, সভায় কিন্তু কেউ এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। বরঞ্চ প্রত্যেকের সেন্টিমেন্ট ছিল এক। আইপিএল থেকে আসা টাকা যেন কমে না যায়। আর্থিক ভাবে নিজের রাজ্য সংস্থাগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এরই মধ্যে বোর্ড প্রেসিডেন্ট একটি বৈপ্লবিক প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে সেটিও সভায় গৃহীত না হয়ে স্থগিত হয়ে যায়। আপাতত তা টেকনিক্যাল কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টেকনিক্যাল কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে ফের ওয়ার্কিং কমিটিতে পাঠাবে। প্রস্তাবটি হল, পরের বছর থেকে রঞ্জিতে হোম ম্যাচ তুলে দেওয়া। প্রত্যেকটা টিম নিরপেক্ষ রাজ্যের মাঠে খেলবে। অর্থাৎ বাংলা বনাম ঝাড়খন্ড যদি ম্যাচ হয় তারা গুয়াহাটিতে বা কটকে খেলতে পারে। কিন্তু কখনওই ইডেন বা রাঁচিতে নয়। এই প্রস্তাবের পিছনে সেন্টিমেন্ট হল, বোর্ড বেশ কিছু পিচ প্রস্তুতকারকের অভিযোগ পেয়েছে। এঁরা বোর্ডকে বলেছেন, হোম ম্যাচে হোম টিম অর্ডারি উইকেট তৈরির জন্য পাগল করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুরোধ করে ঘাস ছেঁটে ফেলার। |
বোর্ড চায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট সবুজ উইকেটে খেলা হোক। যাতে বিদেশে গিয়ে এমন অপদস্ত হতে না হয়। নিরপেক্ষ রাজ্যের মাঠে খেলা পড়লে হোম টিম ব্যাপারটাই থাকছে না। তখন কেউ পিচ প্রস্তুতকারকের ওপর ঘাস ছাঁটা নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। এই প্রস্তাব পেশ হতে দক্ষিণাঞ্চলের এক ক্রিকেট কর্তা বলেন, “অতি-উত্তম! অবিলম্বে কার্যকর হওয়া উচিত।” বাকিরা কেউ কেউ বলতে থাকেন, হোম ম্যাচে হাজার-দু’হাজার লোক মাঠে থাকে। তাদের স্বার্থ তা হলে বিপন্ন হবে। শ্রীনিবাসন তখন বলেন, “টেস্ট ম্যাচেই যেখানে লোক হচ্ছে না, সেখানে রঞ্জি ম্যাচে ওই সামান্য দর্শকদের নিয়ে ভাবার দরকার নেই। তার চেয়ে অনেক জরুরি সবুজ উইকেটে রঞ্জি খেলানোর ব্যবস্থা করা।” তখন বাকিরাও একমত হয়ে যান যে, হোম দর্শকের কথা ভেবে লাভ নেই। রঞ্জি বরঞ্চ নিরপেক্ষ মাঠেই হোক।
ঠিক এই সময়ে আবার পাশ না হয়ে প্রস্তাবটা ঠেলে দেওয়া হয় টেকনিক্যাল কমিটিতে। বলা হয়, আমাদের আরও ভাবতে হবে। সদস্যরা যা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। এটা এক রকম এক পা এগিয়ে দু’পা পিছানো। ওয়ার্কিং কমিটির সেন্টিমেন্ট যখন এই আইন পাশের পক্ষে, তখন কেন তা মুলতুবি রাখা হচ্ছে, এই প্রশ্ন অবশ্য কেউ তোলেননি। ভারতের বয়স্ক ক্রিকেটারদের সম্পর্কে অবসর-নীতি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে যে জাতীয় বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটা নিয়েও একটা কথা নয়। সচিন কবে যাবেন, রাহুল কবে ছাড়তে পারেন এ ব্যাপারে বোর্ড কোনও কথা বলবে কি না এ সব প্রসঙ্গ কেউ তোলেনওনি। আলোচনা ফের ঘুরে যায় সহারা এবং টিভি স্বত্বের টাকার দিকে।
২০১২-র ভারতীয় ক্রিকেট! যেখানে ক্রিকেট নেই। আছে কেবল ক্রিকেট বাণিজ্য। |