শীতে আশানুরূপ বৃষ্টি হয়নি। জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে ঘাসবন। খাবারের অভাবে ডুয়ার্সের জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে বার হয়ে পড়ছে গন্ডার। সমস্যায় পড়েছেন জঙ্গল লাগোয়া এলাকার কৃষকেরা। সন্ধ্যা নামলেই গন্ডার হানা দিচ্ছে বেগুন, ডাল খেত সাবাড় করে দিয়ে যাচ্ছে। সিদাবাড়ি, ব্যাঙডাকি, প্রধানপাড়া গ্রামের কৃষকেরা নাজেহাল। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে শালকুমরাহাটে এক কৃষক গন্ডারের গুঁতোয় জখম হন। ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতরও। জঙ্গল লাগোয়া এলাকাতেই ওত পেতে থাকে চোরাশিকারীরা। ফলে গন্ডার বাঁচাতে নজরদারি বাড়িয়েছেন জলদাপাড়ার বনকর্তারা। কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর অবশ্য বলেন, “গন্ডার যাতে লোকালয়ে ঢুকে না-পড়ে সেই জন্য আমাদের নজরদারি থাকে। এ বারও নজর রাখা হয়েছে।” প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার গৃহপালিত পশু খাবারের খোঁজে জঙ্গলে ঢোকে। সেই জন্যই অভয়ারণ্যের ভেতর গন্ডার সহ কয়েকটি প্রজাতির তৃণভোজী প্রাণীর খাদ্য ভাণ্ডারে আঘাত পড়ছে। যে সমস্ত জঙ্গলে সারা বছর ঘাস থাকে সেখানেই গন্ডার থাকতে পারে। |
শুকিয়ে গিয়েছে ঘাস জমি। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
এদিক দেশে গন্ডারের আদর্শ বিচরণভূমি হল অসমের কাজিরাঙা। বর্ষায় ব্রহ্মপুত্রের জলে পুষ্ট হয় কাজিরাঙার ঘাসবন। জলদাপাড়ার ভিতর দিয়ে গিয়েছে তোর্সা। এ ছাড়া হলং, বুড়ি তোর্সা, তিতি ও বানিয়া নদীও রয়েছে। জলদাপাড়াতেও ঘাস জমির অভাব নেই। বাইরেও কৃত্রিম ঘাসবন তৈরি করার কাজ চলছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জলসেচের মাধ্যমে ঘাস জমি সবুজ করে রাখার নিয়ম নেই। সেই কারণেই গন্ডারের পাল খাবারের সন্ধানে জলদাপাড়া থেকে বার হয়ে পড়ছে। সহজে খাবার পেতে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। ডিএফও বলেন, “খাদ্য সংকট এড়াতে ফি বছর গন্ডারদের জন্য ঘাস জমি তৈরি করছি। এ বছর ১০০ হেক্টর জমিতে ঘাস জমি হচ্ছে। ৫ বছরে গন্ডার ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে ধরে নিয়ে আরও ১০ বর্গ কিমি এলাকায় ঘাস জমি তৈরি হবে।” জলদাপাড়ার আয়তন ২১৬ বর্গ কিমি। তার মধ্যে ঘাস বন রয়েছে ৬০ বর্গ কিমি। জলদাপাড়ায় ১৬০টির মতো গণ্ডার রয়েছে। অন্য সময় জঙ্গলের ভেতর সবুজ ঘাস থাকায় গন্ডাররা বাইরে তেমন বার হয় না। ন্যাফ মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “জলদাপাড়ার জঙ্গলে ঘাসজমি বাড়ানোর পাশাপাশি গবাদি পশু জঙ্গলে চরানো বন্ধ করতে হবে। তাহলেই শীতকালে খাদ্যাভাব রোধ করা যাবে।” |