রাজ্য সড়ক সহ পাথরে বাঁধানো নদীর পাড় ধসে পড়ায় রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মানুষ দোষ দিচ্ছেন স্থানীয় ইটভাটাগুলিকেই। মাত্র দু’বছর আগে ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৮ মিটার চওড়া পাথরের স্পার বাঁধিয়ে এই এলাকায় ভাঙন রোধের কাজ হয় ৩ কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু দু’টি বর্ষা পার হতে না হতেই এ ভাবে স্পার ধসে পড়ায় সকলেই আতঙ্কিত। রানিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের নীলিমা খাতুন বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকার আশেপাশে যথেচ্ছ ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটার জন্য। কোথাও এক মানুষ সমান গর্ত কাটা হয়েছে। সেই সব গর্তে জল পড়ে সেগুলো জলাশয়ের আকার নিয়েছে। রীতিমতো মাটি কাটার যন্ত্র বসিয়ে দিনে দুপুরে লরি বোঝাই করে মাটি কাটা চলছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি বহু বার লিখিত ভাবে সে কথা পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি। এখন সেই কারণেই এই ধস নামল।” |
নদীর পাড়ে পাথরে বাঁধানো প্রায় ৭০ মিটার স্পার মঙ্গলবার সকালে ধসে পড়ল ভাগীরথীতে। |
ভাগীরথীর ভাঙনের হাত পনেরো দূরেই বাড়ি মানেরা বিবির। তিনি বলেন, “গত কাল সন্ধ্যাতেও নদীর পাড় ছিল স্বাভাবিক। সড়ক পথ ধরে লরি, ট্রেকার সবই চলেছে। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি ধীরে ধীরে বসে গেল স্পারের বিরাট অংশটুকু।” জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক এনাউর রহমান বলেন, “ওই রাস্তা ধসে গিয়েছে। তাই ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল আর সম্ভব নয়। গোটা এলাকাটাই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। আশপাশের এলাকা থেকে মানুষদের প্রয়োজনে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। প্রশাসন ও সেচ দফতরের কর্তারা এলাকার পরিস্থিতি দেখে এসেছেন। কী ভাবে এই ভাঙন ঠেকানো যায় তা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেচ দফতরকে।”এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য কংগ্রেসের ঝর্না দাসের অভিযোগ, “এই এলাকা ভাঙন কবলিত জেনেও যথেচ্ছ ভাবে মাটি কাটার কাজ চলছে। কিছু ইটভাটা মালিকই তার জন্য দায়ী। জমি থেকে বড় গর্ত করে মাটি তুলে নেওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে স্পার।” তাঁর অভিযোগ, “শুধু মাটিই কাটা হচ্ছে না, ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক মাটি বোঝাই ভারি লরি যাতায়াত করছে। এর ফলেই স্পার ধসে পড়েছে। অবিলম্বে প্রশাসনকে এই মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে।” সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের রঘুনাথগঞ্জ শাখার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তুষার অধিকারীও বলেন, “মাটি বোঝাই লরি যাতায়াতের ফলে স্পারের উপরে বিরাট চাপ পড়ছে। স্পারটি আস্তে আস্তে নদীর দিকে সরে যাচ্ছে। যে অংশটুকু এখনও অক্ষত রয়েছে, সেটুকুও ঠেকানো যাবে না, যদি এই কাণ্ড চলতেই থাকে।” |
মহকুমাশাসক অবশ্য বলেন, “গ্রামবাসীরা কখনও আমাকে বলেননি যে, ওই এলাকায় নদীর পাড়ে গর্ত করা হচ্ছে। ওই সড়ক ধরে যে মাটি বোঝাই ভারি লরি যাতায়াত করে, তা-ও আমাকে বলা হয়নি। কোনও অবস্থাতেই বেআইনি ভাবে মাটি কাটার কাজ করতে দেওয়া হবে না। সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলব আমি।” স্থানীয় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নন্দকিশোর মুন্দ্রা বলেন, “ওই এলাকায় নদীর পাড়ে কোনও কোনও ইটভাটা মাটি কাটে। যাঁরা সেই বেআইনি কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। তবে সব ইটভাটাকে এক সঙ্গে দায়ী করলে ভুল হবে।” তাঁর বক্তব্য, “যে সড়ক ধসে গিয়েছে, তা আগে থেকেই দুর্বল ছিল। নিয়মিত ভারি যান চলাচলের ফলেই তা ভেঙে পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই।”
|