লকআপে আত্মহত্যার চেষ্টা ধৃতের
খুনি প্রেমিকই, দাবি পুলিশের
কআপেই আত্মহননের চেষ্টা করল শ্রীরামপুরের ভট্টাচার্য বাগান এলাকার তরুণী অপর্ণা গোস্বামী খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই খুন হতে হয় ওই তরুণীকে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রতীশ বিশ্বাস ওরফে পিঙ্কু নামে এক যুবককে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত যুবক খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্কের’ কথাও স্বীকার করেছেন পিঙ্কু। অপর্ণা ‘বিয়ের জন্য চাপ’ দেওয়ায় এবং ‘যখন-তখন টাকা চাওয়াতেই’ তাঁকে খুন করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলে বিবাহিত যুবক পিঙ্কু পুলিশকে জানিয়েছেন।
ওই যুবকের বাড়ি শ্রীরামপুরের সাতঘড়ায়। তিনি পেশায় ট্রাক চালক। মঙ্গলবার তাঁকে শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
যএ দিকে, সন্ধ্যায় থানার লকআপের মধ্যেই পিঙ্কু কম্বল ছিঁড়ে গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পুলিশ তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ধৃত যুবক খুনের কথা স্বীকার করলেও তাঁর বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। আরও জেরা করা হচ্ছে।”
সোমবার সকালে শ্রীরামপুরের তালপুকুরের একটি পুকুরপাড়ের ঝোপ থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বছর চব্বিশের ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পিঙ্কুর পরিচয় জানা যায়। সোমবার রাতে শ্রীরামপুরের আইসি তথাগত পাণ্ডে বছর তিরিশের ওই যুবককে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে ঘটনার দায় অস্বীকার করলেও টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়ে যুবকটি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, কয়েক মাস আগে পিঙ্কুর ঠাকুমাকে আয়া হিসেবে দেখাশোনা করতেন অপর্ণা। সেই থেকেই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক। এ দিন থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের কাছে পিঙ্কু বলেন,“ইদানীং নানা কারণে টাকা চাইত অপর্ণা। বিয়ের জন্যও চাপ দিচ্ছিল। বিয়ে না করলে বাড়িতে জানিয়ে দেবে বলেছিল। এ ভাবে ব্ল্যাকমেল করাতেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
তদন্তকারীরা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ৮টা ফোন করে অপর্ণাকে বাড়ি থেকে ডাকেন পিঙ্কু। দু’জনে নওগার মোড়ে দেখা করেন। তার পরে ওই তরুণীকে রেসিং সাইকেলে চাপিয়ে সাতঘড়ায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে একটি নির্জন জায়গায় দু’জনের ঝগড়া হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, সেখানেই ধর্ষণ করে মেয়েটিকে গলায় রুমাল পেঁচিয়ে খুন করেন ওই যুবক। মেয়েটির মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং খুনে ব্যবহৃত রুমাল পাশে ডোবার কাছে ফেলে দেন। পরে দেহটি গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে তালপুকুরে ফেলে দেন।
পিঙ্কু অবশ্য দাবি করেছেন, সাতঘড়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন অপর্ণা। তখন সাইকেলে করে তাঁকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে তালপুকুরে নিয়ে যান। সেখানেই খুন করেছেন। তবে, ধর্ষণের অভিযোগ মানতে চাননি ওই যুবক। যদিও এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আমরা যা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি, তাতে এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, খুনের আগে মেয়েটির উপর যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল।” এ দিন বিকেলে ধৃতকে নিয়ে গিয়ে সাতঘড়ার ওই ডোবা থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার সময় ধৃতের সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। পুলিশের বক্তব্য, একা একা একটি সাইকেলে করে একটি অচেতন তরুণীকে আধ কিলোমিটার নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তাঁদের অনুমান, হয়, যুবকটি কোনও গাড়ি করে তরুণীর দেহটি নিয়ে গিয়েছিল অথবা এই কাজে কেউ তাকে সাহায্য করেছিল কিনা, পুলিশ দেখছে।
বছর পাঁচেক আগে এক পঞ্জাবি যুবককে বিয়ে করে পঞ্জাবে চলে যান অপর্ণা। সেখানে স্বামী মারা যাওয়ায় বছর খানেক আগে শ্রীরামপুরে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। ৪ এবং ২ বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে এখানে বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকছিলেন তিনি। আয়ার কাজ করতেন। এ দিন শ্রীরামপুর থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে নিহতের বোন মুনমুন বলেন, “দু’টো ফুলের মতো শিশুর মাকে ও (পিঙ্কু) খুন করল। বাচ্চা দু’টোকে এখন কে দেখবে। ওর বাঁচার কোনও অধিকার নেই। ওর যেন চরম শাস্তি হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.