নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসকর্মীর গাড়িতে বিস্ফোরণ স্বাধীন ভারতে বিদেশি কূটনীতিকের আক্রান্ত হওয়ার প্রথম ঘটনা। হানাদার যে এক জন সন্ত্রাসবাদী, তাহাতে সন্দেহ নাই। দূত যে এমনকী যুদ্ধের কালেও অবধ্য, দূতাবাসকর্মীও তা-ই, সভ্যতার এই বুনিয়াদি নিয়মটি সন্ত্রাসবাদীরা মানে না। ইজরায়েলি দূতাবাসকর্মীকে ভারতের রাজধানীতে হত্যা করার চেষ্টার মধ্যে কিছ গূঢ় অভিসন্ধিও থাকা সম্ভব দুই দেশের সম্পর্ক বিষাইয়া দেওয়া। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে উত্তরোত্তর নিবিড় হইতেছে, তাহা স্পষ্ট। ২৬/১১-র জঙ্গি হামলার সময়েও ইহুদি পাদ্রিকে জঙ্গিরা সস্ত্রীক হত্যা করিয়াছিল। সন্ত্রাসবাদীদের নানা রকম ছক থাকে। তবে একই সঙ্গে জর্জিয়ার তিবলিসিতেও ইজরায়েলি দূতাবাসকর্মীদের নিশানা করিয়াছিল সন্ত্রাসীরা। জর্জিয়ার বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করিয়া ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়। নয়াদিল্লিতে সেটা সম্ভব হয় নাই।
এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট সন্ত্রাসের ভুবনায়ন ঘটিয়াছে। ইতিপূর্বে আফগানিস্তানের কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসকর্মী ও প্রযুক্তিবিদরা জঙ্গি হানায় আক্রান্ত, নিহত হইয়াছেন। খলিস্তানি জঙ্গি ও কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতীয় বা অন্যদেশীয় বিমান মাঝ-আকাশে ছিনতাই করিয়াছে কিংবা উড়াইয়া দিয়াছে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, মাদ্রিদ, বার্লিন, লাহৌর, করাচি, জাকার্তা, টোকিয়ো, সর্বত্র সন্ত্রাসবাদীরা সক্রিয়। তবে নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসকর্মীদের উপর হামলা নাগা, মণিপুরি, আল্ফা জঙ্গিরা করিবে না। এ কাজ তাহাদেরই, যাহারা জায়নবাদকে শত্রু জ্ঞান করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেন নাই। তবে ইসলামি জঙ্গিরাই যে জায়নবাদকে নির্মূল করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ইহা সুবিদিত। ইরানের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আহমদিনেজাদ ইজরায়েলকে পৃথিবীর বুক হইতে নিশ্চিহ্ন করিতে সংকল্পবদ্ধ। ইরান-সমর্থিত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী যদি এই অপকর্মের পাণ্ডা হইয়া থাকে, সেটা অন্তত আশ্চর্যের নয়। ইজরায়েলের তরফে এ জন্যই ইরান ও তাহার মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হেজবুল্লাকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হইয়াছে। নয়াদিল্লির পক্ষে সরাসরি ইরানকে দায়ী করা সম্ভব নয়। দুই দেশের সম্পর্ক মিত্রতার। এ ধরনের ষড়যন্ত্রে তেহরানের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণও নাই। তবে ভারতীয় গোয়েন্দাদের অবশ্যই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচন করিতে হইবে, এবং দ্রুত। যদি তাহাতে ইরান সরকার কিংবা স্নেহপুষ্ট কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, তবে তাহার নিন্দাও করিতে হইবে।
প্ররোচনা যে ইজরায়েলের তরফেও একেবারে নাই, ইহা বলা যাইবে না। ইরান পরমাণু বোমা বানাইয়া ফেলিতে চলিয়াছে, ইহা প্রচার করিয়া তেল আভিভ হইতে নিয়মিত ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাইবার হুমকি দেওয়া হইতেছে। সম্প্রতি ইরানি পরমাণু-প্রযুক্তিবিদ নিহত হইয়াছেন, এবং তাঁহাকে হত্যার দায় ইরান ইজরায়েলের উপরেই চাপাইয়াছে। এই প্রেক্ষিতে বিচার করিলে ইরানি জঙ্গিদের পক্ষে যেখানেই সুযোগ মেলে ইজরায়েলি বিশিষ্টজনদের আঘাত করা, অন্যায় হইলেও, অস্বাভাবিক নয়। তবে যাহারাই সন্ত্রাসে লিপ্ত হউক এবং যাহার বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস প্রযুক্ত হউক, সন্ত্রাসের নিন্দা, সম্ভব হইলে প্রতিরোধ কিংবা আগাম প্রতিষেধক প্রয়োগ করা দরকার। বিশ্বায়িত সন্ত্রাসবাদ যাবতীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ হইতে রিক্ত হইয়াছে। ইহা আজ স্রেফ বর্বরতার অন্য নাম। |