বিহারে এসে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নোয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে রাজ্যের কাজের প্রশংসা করলেন। নীতীশের দাবি মেনে বন্যাক্লিষ্ট এলাকায় ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ বাড়ানোর আশ্বাসও দিলেন। কিন্তু এরই পাশাপাশি, ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ সুনিশ্চিত রোজগার যোজনা’ অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজ নিয়ে অসন্তোষও চেপে রাখেননি তিনি। এই প্রকল্পের কাজে বিহার যে অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক পিছিয়ে কড়া ভাষায় তা জানিয়ে গেলেন রমেশ। বিহারের কংগ্রেস নেতারা রমেশের সঙ্গে দেখা এ দিনই এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ জানান। এই ব্যাপারে সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
রমেশের বক্তব্য, গ্রামীণ সুনিশ্চিত রোজগার যোজনা প্রকল্পে অন্য রাজ্যগুলির কাজের তুলনায় বিহার অনেক পিছিয়ে। অন্ধ্রপ্রদেশের তুলনা টেনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “চলতি আর্থিক বছরে বিহার যেখানে ৩ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে, সেখানে অন্ধ্র ৮ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে কেন্দ্রের কাছে।” রমেশ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারেরই একটি বিবৃতি উল্লেখ করে বলেন, “এই প্রকল্পের টাকায় পঞ্চায়েতের মুখিয়ারা যে গাড়ি কিনেছে মুখ্যমন্ত্রী আগেই তা বলেছিলেন। এই ব্যাপারে সামাজিক সমীক্ষার কাজ চলছে। সিএজি-ও হিসাব পরীক্ষার কাজ করছে। এই প্রকল্পের টাকা যাতে ঠিক মতো কাজে লাগানো হয় তা বিহার সরকারকে দেখতে হবে।” নীতীশ তাঁকে এই ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রমেশ।
মাওবাদী প্রভাবিত জামুই জেলায় গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে অবশ্য বিহার সরকারের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরি হয়েছে। এর জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত বারের তুলনায় এই বারের কাজ যথেষ্ট ভাল।” রমেশ রাজ্য সরকারকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, “অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে কেন্দ্র কোনও রাজ্যকে আলাদা ভাবে দেখবে না।” তিনি মাওবাদী প্রভাবিত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং বিশেষ করে ছত্তীসগঢ় রাজ্যের ব্যাপারে জানিয়েছেন, “উন্নয়ন কর্মসূচির রূপায়ণ করে এবং রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করা হবে।”
নীতীশের দাবি মেনে বন্যাপ্রবণ এলাকায় কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় প্রকল্প ইন্দিরা আবাস যোজনার বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যাপারে তাঁর মন্ত্রক যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।” এই বরাদ্দ যে আগামী পঞ্চবার্ষিক (২০১২-১৭) পরিকল্পনায় করা হবে তা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র বিহারের বন্যাপ্রবণ এলাকার প্রতি পরিবার পিছু ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। এর মধ্যে ওই সব এলাকার পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হবে।”
বিহারে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার কাজ মার্চে শুরু হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন জানান, ২০০২ সালে যে বিপিএল তালিকা তৈরি হয়েছিল তাতে তিনটি রাজ্য--- পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ওড়িষ্যায় গরিবদের সেই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। এটা তাঁদের প্রতি অবিচার হয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন আগামী এপ্রিলের মধ্যে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার কাজ ২৭টি জেলায় শেষ করা হবে। |