দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসারদের হিসাব বহির্ভূত আয়ে গড়ে তোলা সম্পত্তি ক্রোক করে আম জনতার কাছে প্রশাসনের স্বচ্ছ্ব ভাবমুর্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন নীতীশ কুমার। কোথাও এমন অফিসারদের প্রাসাদোপম বাড়ি দখল করে বানানো হয়েছে দরিদ্র শ্রেণির ছেলেমেয়েদের স্কুল। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের এমন কাজ প্রশংসাও পেয়েছে। কিন্তু এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য ভাবে। দেখা যাচ্ছে, এই সব দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের অনেকেরই জমি-জায়গা, বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে বিহারের বাইরের রাজ্যেও। রাজ্যের বাইরে ‘দখল’ নেওয়া সম্পত্তি কী ভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে সরকারি তরফে স্পষ্ট কোনও নীতি না থাকায় ফাঁপরে বিহার সরকার।
দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের বিচারের জন্য ২০০৯ সালে বিহারে ‘বিশেষ আদালত আইন’ প্রণীত হয়। এখনও পর্যন্ত ৪৫ জন অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি দখল নেওয়ার নির্দেশ দেয় এই বিশেষ আদালত। এঁদের প্রায় সকলেরই রাজ্যের বাইরেও সম্পত্তি আছে। বিহার সরকার আদালতের নির্দেশে কিছু ক্ষেত্রে সেই সব সম্পত্তির দখলও নিয়েছে। কিন্তু সেই দখল নেওয়া সম্পত্তি নিয়ে বিহার সরকার কী করবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও নীতি নেই। ফলে রাজ্য সরকার তো বটেই, চিন্তায় রাজ্য ভিজিল্যান্স দফতরও।
ভিজিল্যান্স দফতরের এক কর্তার কথায়, “আইন দেশের সব ক্ষেত্রেই সমান। বিশেষ আদালত এই সব সম্পত্তি দখল নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। কিন্তু সেই সব সম্পত্তি নিয়ে রাজ্য সরকার কী করবে তা নিয়ে কোনও নীতি এখনও স্থির হয়নি। ফলে এটি এখন বড় চিন্তার বিষয়।”
ভিজিল্যান্স দফতর সূত্রে খবর, প্রাক্তন আইএএস কর্তা এসএস বর্মার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছিল। আদালতে নির্দেশ দেয় ওই সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এই প্রাক্তন আমলার উত্তরপ্রদেশে দু’টি জমি আছে। সেই জমি দখল নেওয়ার জন্য পটনা থেকে তদন্তকারী একটি দল ওই রাজ্যে গিয়ে সেখানকার জেলা প্রাশাসনকে আদালতের নির্দেশ হস্তান্তর করেছে। সেই জমিতে বিহার সরকারের পক্ষ থেকে নোটিসও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার এরপর কী করবে তা নিয়ে সংশয়।
এই ভিজিল্যান্স কর্তার কথায়, রাজ্যের মধ্যে এ রকম সম্পত্তি দখল নিয়ে সরকার সেখানে স্কুল এবং হোস্টেল তৈরি করছে। কিন্তু রাজ্যের বাইরে দখল নেওয়া সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বাইরের রাজ্যে জমি দখল নেওয়ার ব্যাপারে পটনার জেলাশাসক সঞ্জয় কুমার সিংহকে ‘নোডাল’ অফিসার করা হয়েছে। তাঁরা আদালতের নির্দেশ কার্যকর করছেন। কিন্তু অতঃপর ওই সম্পত্তি নিয়ে কী করা হবে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। জেলাশাসক কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “এই নিয়ে সরকার এখন ফাঁপরে।’
বার্মার মতোই রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি নারায়ণ মিশ্রও বিশেষ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তদন্তে তাঁর ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার বেআইনি সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে। মিশ্রর মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি ফ্ল্যাট ও ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগে দু’টি জমির হদিশ পেয়েছে ভিজিলান্সের তদন্তকারী দল। একই ভাবে রাজ্যের প্রাক্তন ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তা ওয়াই কে জয়সওয়ালের নামে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর সম্পত্তি দখল নেওয়া নির্দেশ দিয়েছে ওই বিশেষ আদালত।সম্প্রতি বিজেপি-র বিধায়ক সোনেলাল হেমব্রমের ২৫ লক্ষ টাকার বেআইনি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। সোনেলাল আবগারি কমিশনার পদে অবসর নেন। এরপরেই ২০০২ সালে তিনি রাজনীতিতে আসেন। তাঁর নামে ঝাড়খণ্ডেও জমির সন্ধান পেয়েছে ভিজিল্যান্স দফতর। |