তিন বছর পরে আবার শুরু হচ্ছে বাগজোলা খালের বুকে জমে থাকা পাঁক পরিষ্কারের কাজ। কিন্তু ফি বছরের মতো এ বারও সেই পাঁক খালের পাড়ে জমিয়ে রাখলে তা বর্ষায় ফের খালে গিয়ে পড়বে বলে শঙ্কিত সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। সেচমন্ত্রী অবশ্য ওই আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন।
বাগজোলা নামেই খাল। সেটি আসলে উত্তর কলকাতা, বরাহনগর এবং দমদমের বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি নালা। এই অংশটির নাম আপার বাগজোলা। রাজারহাট, নিউ টাউন, ভাঙরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে লোয়ার বাগজোলা। বরাহনগরে বি টি রোড থেকে বাঙুরের কাছে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাগজোলা খাল পরিষ্কার করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সেচ দফতর।
পুরসভার নিকাশি নালা বাহিত জল এবং বর্জ্য জমে বাগজোলা খালের গভীরতা কমছিল কয়েক বছর ধরেই। সে কারণে খালের পাঁক তুলে ফেলার ব্যবস্থা করে সেচ দফতর। কিন্তু প্রতিবারই নোংরা এবং পাঁক তুলে পাড়ে জমিয়ে রাখা হয়। বর্ষায় সেই পাঁক ধুয়ে ফের খালে পড়ে একই অবস্থা দাঁড়ায়। এই নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আশা করা যায়, একই ভুল আর হবে না। সংস্কার না হওয়ায় বর্ষায় খালের বাড়তি জল ‘ব্যাক ফ্লো’ করে আশপাশের এলাকাগুলি প্লাবিত করে।’’ তাই কল্যাণবাবুর সুপারিশ, খাল সংস্কারের পাশাপাশি পুরসভার উচিত যে সব নিকাশি নালা বাগজোলা খালে পড়েছে, সেগুলির মুখে লকগেট বসানো। বর্ষায় লকগেট বন্ধ রাখলে বাড়তি জল ‘ব্যাক ফ্লো’ করে আশপাশের এলাকাগুলিকে প্লাবিত করতে পারবে না।
খাল সাফ করে পাঁক যাতে পাড়ে জমিয়ে না রাখা হয়, সেই আবেদন জানিয়ে দমদমের একটি পরিবেশ সংগঠন ‘পিপলস গ্রিন সোসাইটি’ সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞাকে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘ছোট ছোট ঠিকাদারকে দিয়ে খালের পাঁক সাফ করায় কোনও দিন পূর্ণাঙ্গ ড্রেজিং হয় না। তা ছাড়া এ বছরের টেন্ডার নোটিসে দেখেছি পাঁক সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। ফলে এ বারও পাঁক তুলে খালের পাড়ে জমানো হবে এবং তা বর্ষায় ফের খালেই গিয়ে জমবে।’’ তাঁর দাবি, ১৭ কোটি টাকার ওই কাজ শুরুর আগে খাল সংলগ্ন বাসিন্দাদের মতামত নেওয়ার জন্য একটি গণ-শুনানি করা হোক।
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা অবশ্য এলাকাবাসীর আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘খাল থেকে তোলা পাঁক এবং জঞ্জাল অন্যত্র সরাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তবু দীর্ঘ দিনের সমস্যার কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলছি। খালপাড়ের সব পুরসভাকেও এই কাজে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ তবে সেচমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, খালের পাড়ে আর কোনও ভাবেই পাঁক জমিয়ে রাখা হবে না।
বাগজোলা খাল সংস্কার করে তার গভীরতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি। কারণ আগামী বর্ষায় উত্তর কলকাতার অন্তত তিনটি ওয়ার্ডের জমা জল ফেলা হবে বাগজোলা খালে। গত তিন বছর ধরে যশোহর রোডের নীচ দিয়ে যে পাইপলাইনগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলি দত্তবাগান পাম্পিং স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই প্রকল্পটির উদ্বোধন হয়েছে সম্প্রতি। তাই বাগজোলা খালের গভীরতা না বাড়ালে বর্ষায় শুধু কলকাতার ফেলা জলেই খাল উপচে দমদমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভাসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। |