হাওড়ার বঙ্কিম সেতু থেকে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে মৃত্যু হল এক তরুণীর। ই এম বাইপাসে আর এক তরুণী জখম হলেন সঙ্গীর ব্লেডে। দু’টি ঘটনায় এ ভাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকল ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। কারণ, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দু’টি ঘটনার পিছনেই রয়েছে প্রেমজনিত বিবাদ।
মঙ্গলবার দুপুরে হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপর থেকে হাওড়া স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঝাঁপ দেন এক তরুণী। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যাত্রী ও রেলপুলিশের কর্মীরা ওই তরুণীকে দ্রুত উদ্ধার করে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় শ্বেতা দত্ত নামে ওই তরুণীর। বি-কম পরীক্ষার্থী শ্বেতার বাড়ি ব্যাঁটরা থানার হৃদয়কৃষ্ণ ব্যানার্জী লেনে।
রেলপুলিশ জানায়, বেলা দেড়টা নাগাদ ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা দেখেন এক তরুণী বঙ্কিম সেতুর রেলিং টপকে ঝাঁপ দিচ্ছেন। তাঁরা চিৎকার করার আগেই ওই তরুণী হুড়মুড় করে প্ল্যাটফর্মে পড়ে গোঙাতে থাকেন। ছুটে আসেন ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেল পুলিশ কর্মীরা। দুই মহিলা যাত্রীর সহযোগিতায় ওই তরুণীকে হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাওড়া জেলা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং উদ্ধারকারী ট্রেনযাত্রী মিনতি দত্ত বলেন, “আমি আর আমার মেয়ে হাওড়া হাটে যাচ্ছিলাম। চোখের সামনে দেখি মেয়েটা সেতু থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে। ঠিক আমাদের সামনেই এসে পড়ল। চিৎকার করে ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিলাম। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমরাই ওঁকে হাসপাতলে নিয়ে আসি।”
রেল পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর ব্যাগে দামি মোবাইল, ৭০০ টাকা ও একটি চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিতে লেখা ছিল তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। মোবাইল থেকে নম্বর পেয়ে তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওই তরুণী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। সেই কারণেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেলপুলিশ।
ধৃত রঞ্জিত বারিক।
নিজস্ব চিত্র |
অন্য দিকে, সঙ্গীর ব্লেডে তরুণীর জখম হওয়ার ঘটনাটি এ দিন সকালের। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আনোয়ার শাহ-যাদবপুর কানেক্টর রোডের কাছে বাইপাসে অটোয় উঠে বসেছিলেন ওই তরুণী এবং রঞ্জিত বারিক নামে ওই যুবক। আচমকা অটো থেকে চিৎকার শুনে ছুটে যান আশপাশের মানুষ। দেখেন, পিছনের সিটে রক্তাক্ত অবস্থায় বছর উনিশের ওই তরুণী বাঁ-হাত ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে। বাঁ-হাতের কনুই থেকে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। আর অটো থেকে লাফিয়ে নেমে এক যুবক চলন্ত একটি বাসে উঠার চেষ্টা করছে। প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও ‘পুলিশ-পুলিশ’ চিৎকার জুড়ে দেন স্থানীয় মানুষ। আশপাশের ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে বাসটিকে ধাওয়া করে যুবককে বাস থেকে নামায়।
অটোর সামনের সিটে বসা প্রত্যক্ষদর্শী আর এক যাত্রী বলেন, “অটোর মধ্যে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। হঠাৎ ওই যুবক পকেট থেকে ব্লেড বার করে তরুণীর গলায় চালিয়ে দেয়। হাত দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করে ওই তরুণী।” সে সময়ে কিছুটা দূরে টহলদারি জিপে ছিলেন গড়ফা থানার পুলিশকর্মী শেখ সাহাবুদ্দিন। তিনিই অটো থেকে রক্তাক্ত তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই তরুণীর হাতে ১৯টি সেলাই পড়েছে। গলাও ব্লেডের আঘাতে জখম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ওই তরুণীর সঙ্গী, রঞ্জিত বারিক নামে ওই যুবককে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওই তরুণীকে ব্লেড দিয়ে জখম করেছে ধৃত যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বারুইপুর থানার মল্লিকপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত কসবা শিল্পাঞ্চলের কাছে একটি চামড়ার ব্যাগের কারখানায় কাজ করেন। পূর্ব-যাদবপুর থানার কালিকাপুরের
বাসিন্দা ওই তরুণী পাশের একটি কারখানার কর্মী। পুলিশের দাবি, রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক ধরে দু’জনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এ দিন রঞ্জিত প্রেমের প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করে ওই তরুণী। তার পরেই আক্রোশের বশে তাঁর গলায় ব্লেড চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রঞ্জিত।
পুলিশের আরও দাবি, রঞ্জিত জানিয়েছে ওই তরুণীকে বহু টাকার উপহার দিয়েছে সে। কয়েক দিন ধরেই মেয়েটি তাকে এড়িয়ে চলছিল। এ দিনও এড়িয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করে। প্রেমের প্রস্তাবও নাকচ করে ঝগড়া শুরু করে দেয়। তাই সে ওই তরুণীকে ব্লেড দিয়ে জখম করে বলে কবুল করেছে রঞ্জিত। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, তরুণীকে জখম করার ছক কষেই এসেছিল রঞ্জিত। সেই কারণেই সঙ্গে ব্লেড নিয়ে আসে সে। এ দিন প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াটা একটা অজুহাত বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এ দিন বিকেলে ওই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই তরুণী বলেন, “আমাকে অটোর মধ্যে ব্লেড চালিয়ে দিয়েছে। এর বেশি কিছুই বলব না।” |