মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের সঙ্গে এসএফআইয়ের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মালদহের সামসি কলেজ। বৃহস্পতিবার বিকালে মনোনয়নপত্র তুলে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা মিছিল করে বার হওয়ার সময়ে কলেজের হস্টেল থেকে এসএফআই সমর্থকেরা ঢিল ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। তার পরে দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে যথেচ্ছ ঢিল ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের ওই সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। সংঘর্ষে দু’পক্ষের মোট ৮ জন জখম হয়েছেন। তার মধ্যে ঢিলের ঘায়ে ৮ জন জখম হয়েছেন। পুলিশের লাঠির ঘায়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থক তথা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে ছাত্র রেজাউল করিম জখম হন বলে সংগঠনের নেতৃত্বের অভিযোগ। মাথা ফেটে যাওয়ায় ২ জন ছাত্রকে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দ্বিতীয় জখম ছাত্র খাইরুল আমিন ছাত্র পরিষদ সমর্থক। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রটি এসএফআই সমর্থকদের ঢিলের ঘায়ে জখম হয়েছেন বলে ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ। ঢিল ছোঁড়াছুড়ির সময়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মীও জখম হন। এসএফআইয়ের হামলা ও পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে টিএমসিপি ও ছাত্র পরিষদ জোট দু’ঘন্টা ধরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। বিকাল ৫টায় পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। জোটের মিছিলে ঢিল ছুঁড়ে হামলার অভিযোগ অবশ্য এসএফআই অস্বীকার করেছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেছেন, “জোটের মিছিলে ছাত্রাবাস থেকে ঢিল ছোঁড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। দু’পক্ষই একে অন্যকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। বাধ্য হয়েই দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশকে মৃদু লাঠি চালাতে হয়। তা না-হলে বড় রকমের কিছু ঘটতে পারত। পুলিশের লাঠির আঘাতে কোনও ছাত্রের জখম হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।” মালদহের এই কলেজটি বেশ কয়েক বছর ধরে এসএফআইয়ের দখলে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ওই কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। এ বার ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জোট করে সংসদ দখলের লড়াইয়ে নেমেছে। এদিন ছিল মনোনয়নপত্র তোলার দিন। কলেজে মনোনয়নপত্র বিলিকে কেন্দ্র করে গোলমাল এড়াতে বেলা ১১টা থেকেই কলেজে কড়া নিরাপত্তা ছিল। পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট ডিউটিতে ছিলেন অরুণ ঘোষ। দুপুর দুটোয় মনোনয়নপত্র তোলার পরে জোটের ছাত্ররা মিছিল শুরু করেন। মিছিল কলেজেই ছাত্রাবাসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঢিল ও ইট পড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রলয় ঘোষ বলেন, “কলেজের ভেতরে কোনও গোলমালের ঘটনা ঘটেনি। মনোনয়নপত্র দেওয়ার কাজ সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। বাইরে ঠিক কী হয়েছে জানি না।” ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “মিছিল করা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষের কথা শুনেছি। তবে মনোনয়নপত্র বিলির কাজ সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।” টিএমসিপির সামসি কলেজ ইউনিটের সভাপতি মুন্সেফ হক ও ছাত্র পরিষদ নেতা মহম্মদ খুরসেদ একযোগেই অভিযোগ করেন, “জোট হওয়ায় ছাত্র সংসদ হারানোর ভয়ে এসএফআই মরিয়া হয়ে হামলার পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশের একাংশও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনিমেষ সিংহ জোটের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কেউ হামলা চালায়নি। নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে জোট গোলমাল পাকাতে চাইছে।” |