জেলার হাসপাতালে পরিকাঠামোর উন্নতি এবং কলকাতায় রোগী রেফারের প্রবণতা কমাতে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু স্রেফ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবেই এই পরিকল্পনা কার্যকর করা এই মুহূর্তে কঠিন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশ।
বস্তুত এমডি-এমএস পাশ করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না-থাকায় রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিভাগ একের পর এক কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক হাসপাতালে বিভাগগুলো পুরো বন্ধ না-হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সংখ্যা এত কমে গিয়েছে যে, পরিষেবা মার খাচ্ছে ভীষণ রকম। অভাবের ছবিটা ঠিক কী রকম?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর: এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে মহকুমা ও স্টেট জেনারেল মিলিয়ে মোট ২৮টি হাসপাতালের একাধিক বিভাগে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না-থাকায় সেখানে কোনও পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থোপেডিক, রেডিওলজি, প্যাথলজি, মেডিসিন, সার্জারি ও অ্যানেস্থেশিয়ার দৈনদশা সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, এই সব হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে তাঁদের ১০-২০ শতাংশকে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে কলকাতায়। এর উপরে ৭টি নতুন স্বাস্থ্যজেলা তৈরি হলে সেখানে কী ভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জোগাড় হবে, কর্তারা তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
ডাক্তারের এত টানাটানি কেন?
|
নেই রাজ্য |
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক |
না-থাকা হাসপাতাল |
অর্থোপেডিক |
১২ |
রেডিওলজিস্ট |
৯ |
প্যাথলজিস্ট |
১৩ |
মেডিসিন |
৭ |
সার্জন |
৫ |
অ্যানেস্থেটিস্ট |
৫ |
পেডিয়্যাট্রিক্স |
৩ |
চক্ষু |
২ |
মোট পদ খালি |
মেডিসিন |
৪৭ |
সার্জন |
৪৩ |
অর্থোপেডিক |
১৮ |
রেডিওলজি |
১৭ |
প্যাথলজি |
২২ |
অ্যানেস্থেশিয়া |
৩১ |
|
স্বাস্থ্য-কর্তাদের ব্যাখ্যা: রাজ্যে এমনিতেই প্রতি বছর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাশ করে বেরোন। তাঁদের একাংশ আবার বিদেশে গবেষণা করতে চলে যান, কিংবা মোটা মাইনেতে বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দেন। সরকারি চাকরিতে যাঁরা আছেন, তাঁরাও অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেন?
সদ্য সরকারি চাকরি ছাড়া এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বক্তব্য, “সরকারি চাকরিতে মাইনে কম। গ্রাম-গঞ্জের হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয়। রোগীর চাপ সাংঘাতিক। উপরন্তু প্রতি মুহূর্তে রোগীর বাড়ির লোকজনের হাতে মার খাওয়ার ভয়।” ওই চিকিৎসকের আক্ষেপ, “জেলায় আমাদের পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা কিংবা মাইনে ও নিরাপত্তা বাড়ানো সরকার কোনও কিছুই নিশ্চিত করতে পারছে না।” আর এক ডাক্তারের অভিযোগ, “মহকুমা বা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শুধু বিভাগটুকু আছে। উন্নত যন্ত্রপাতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা, ওষুধপত্র কিছুই নেই। জটিল অপারেশনের সুযোগও কম। অগত্যা অসহায়ের মতো হাত গুটিয়ে বসে থাকা আর রোগী রেফার করা ছাড়া আমাদের উপায় কী?” তাঁর আশঙ্কা, “গুরুতর অসুস্থ রোগীকে রেফার করলে আমাদেরই ঘাড়ে দোষ পড়বে। তখন কেউ দেখবে না যে, সরকার আমাদের পরিকাঠামো দিচ্ছে না।”
তা হলে জেলার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জোগাড় হবে কী করে? বিভাগগুলো এ ভাবে বন্ধই থাকবে? রেফার করা রোগীতে ভরে যাবে কলকাতার হাসপাতাল? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা নতুন ডাক্তার নেব।” কিন্তু টাকার অভাবে সরকার তো দীর্ঘ দিন গ্রুপ-ডি কর্মী বা নার্সই নিয়োগ করতে পারছে না! বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ করে তাঁদের বেতন দেবে কী করে?
সুশান্তবাবুর জবাব, “সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। এমন একটা নিয়মের কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে এমডি-এমএস পাশ করা ডাক্তারেরা অন্তত তিন বছর জেলায় কাজ করতে বাধ্য থাকেন।” |