মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে বলছেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ চাই। বার্তাটি জেলায় জেলায় ছড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে। তবু গ্রামীণ হাসপাতালে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের সেই ‘পিপিপি’ মডেলে প্যাথলজি-এক্স রে-আলট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষাকেন্দ্র হালে পানি পাচ্ছে না। কোথাও সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল যে জায়গা বেসরকারি সংস্থার জন্য বরাদ্দ করছে, সেখানে পাঁচ জনেরও পাশাপাশি দাঁড়ানো মুশকিল। কোথাও জায়গা থাকলেও বিদ্যুৎ নেই।
অগত্যা রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন বেশি খরচে বাইরের বেসরকারি কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করাতে। পিপিপি-তে সামিল বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তরফেও হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। কী রকম?
যেমন, মালদহের কালিয়াচকে এক প্রকল্পের বেসরকারি সংস্থার তরফে আসমুল হকের মন্তব্য, “এক্স-রে, প্যাথলজি, আলট্রাসোনোগ্রাফি-সহ যাবতীয় পরীক্ষার জন্য জায়গা মাত্র চল্লিশ বর্গফুট! রোগীদের বসাতেই তো এর বেশি লাগে! জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বললেন, না-পোষালে চলে যান।” হাওড়ার এক কেন্দ্রের তরফে জামিল আখতারের বক্তব্য, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ৬২০ বর্গফুট দরকার। পেয়েছি অনেক কম। তাই নির্দেশিকা না-মেনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চলছে।” আবার পুরুলিয়ার কৃষ্ণপদ কুমারের আক্ষেপ, “ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষায় খরচ পড়ছে ২০ টাকা। পাচ্ছি ১৫। আমরা তো দাতব্য করছি না। প্রকল্প সফল হবে কী ভাবে?”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর: প্রতিটি ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতালে ফি মাসে ইন্ডোর-আউটডোর মিলিয়ে গড়ে দু’থেকে চার হাজার রোগীর চিকিৎসা হয়। সরকারি ল্যাবে রক্ত-মল-মূত্রের মতো ‘রুটিন টেস্ট’ হয় মাসে এক থেকে দেড় হাজার। “কিন্তু আমাদের ল্যাব চালু হতেই দেখা গেল, রোগীর সংখ্যা কমে একশো-দেড়শো হয়ে গিয়েছে! অথচ আমাদের যন্ত্র, কিট, সব কিনে রাখতে হচ্ছে। কর্মীদের মাইনে গুনতে হচ্ছে। চালাব কী ভাবে?” প্রশ্ন এক সংস্থার কর্ণধারের। ২০১০-র জুনে বিভিন্ন ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালে তৃতীয় দফার পিপিপি প্রকল্পে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব ও আলট্রাসোনোগ্রাফি কেন্দ্র গড়তে টেন্ডার হয়েছিল। ২০১১-র জানুয়ারিতে বিভিন্ন জেলায় চুক্তিও হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেই প্রকল্প গতি হারিয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের উপর্যুপরি নির্দেশ সত্ত্বেও বেশ কিছু জেলায় একটা কেন্দ্রও চালু হয়নি। দফতর সূত্রের খবর: হুগলির বেশ ক’টি হাসপাতালে এই প্রকল্পের জন্য কেনা লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রশিক্ষিত কর্মীরা বসে বসে মাইনে পাচ্ছেন। অথচ কেন্দ্র কবে চালু হবে, কেউ জানে না। এক সংস্থার কর্তা বলেন, “কথা ছিল, তিন মাসে কাজ শুরু হবে। বছর গড়িয়ে গেল! স্বাস্থ্যভবন থেকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-কে বার বার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। জেলা থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না।”
এবং এ সবের প্রেক্ষিতে অভিযোগ উঠেছে, উদ্যোগের সাফল্যের পথে অনেক ক্ষেত্রে জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারাই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি ল্যাবের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজসেরও অভিযোগ মিলেছে। জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা অবশ্য এ সব মানতে নারাজ। পুরুলিয়া, মালদহ বা নদিয়ার কর্তাদের ব্যাখ্যা, ‘প্রক্রিয়াগত’ কিছু জটিলতায় কাজ এগোচ্ছে না। স্বাস্থ্যভবন কী বলছে?
স্বাস্থ্যভবনের আমলারা এই ব্যাখ্যাকে ‘অজুহাত’ হিসেবেই দেখছেন। পিপিপি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত, স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “দ্রুত লাইসেন্স বার করতে হামেশাই ডিএম বা সিএমওএইচ-কে ফোনে তাগাদা দিতে হচ্ছে! যা একেবারেই হওয়ার কথা নয়।”
সুরাহার পথ কী? ওই কর্তা জানাচ্ছেন, “রাস্তাটা আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। শিগগিরই জেলাস্তরে ফের বৈঠক ডাকব। দেখা যাক, কী সমাধানসূত্র মেলে।” |