স্রেফ পড়ে থেকেই ‘বেকার’ হতে বসেছে রক্তদান শিবির থেকে সংগৃহীত ৪১১ ইউনিট রক্ত।
কারণ, ৩০ জানুয়ারি সংগ্রহের পরে ১০ দিনে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে মজুত ওই রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা যায়নি। সময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় ওই রক্ত আর রোগীদের দেওয়া উচিত নয় বলেই দাবি তুলছেন রক্ত বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, সংগৃহীত রক্ত এত দিন পরে পরীক্ষা করলে রিপোর্ট সঠিক না-ও হতে পারে। ফলে রক্ত নিলে গ্রহীতার রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। দু’দিন আগে বিষয়টি জানাজানির পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি পরীক্ষার কিট সময়ে সরবরাহ না হওয়ায় পরীক্ষা করা যায়নি। বুধবার রাতে সেই কিট এলেও এখন আর পরীক্ষার যৌক্তিকতা নেই বলেই মনে করছেন রক্ত-বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনাচক্রে এই সময়েই ব্লাডব্যাঙ্কের রক্তের মান বজায় রাখা নিয়ে শহরে কর্মশালা করছে জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা ন্যাকো।
বিধি অনুযায়ী, সংগ্রহের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই রক্তে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি-সি, যৌনরোগ ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুর ৫টি বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করতে হয়। নয়তো তা রোগীকে দেওয়া যায় না। এর পরে রক্তের বেশ কিছু অ্যান্টিবডি মরে যায় ও সেরাম অস্বচ্ছ হয়ে যায় বলে রক্তের মান পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয় না। স্বভাবতই ওই ৪১১ ইউনিট রক্ত এত দিনে পরীক্ষা করে রোগীদের দেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা স্যাক্স।
প্রশ্ন উঠেছে, এক দিকে যখন রক্ত পরীক্ষার কিট সময়ে সরবরাহ না হওয়ায় সংগৃহীত রক্ত ‘বেকার’ হতে বসেছে, তখন এত টাকা খরচ করে রক্তের মান বজায় রাখা নিয়ে কর্মশালার মূল্য কী? সেই টাকা কি কিট কেনায় খরচ করা যেত না? ন্যাকোর কর্তাদের উত্তর, “এক খাতের টাকা অন্যত্র ব্যয় করা যায় না। রক্ত পরীক্ষা না-হয়ে পড়ে থাকলেও না!” আর স্যাক্স কর্তাদের বক্তব্য, তাঁরা নিজেদের টাকায় কিট কিনে অভাব মেটাতে পারেন না, কারণ সরকারি আইনে তা নিষেধ।
হাওড়া হাসপাতালে সরবরাহের জন্য কিট প্রথমে আসে আরজিকরে। সেখান থেকে হাওড়ায়। আরজিকরের ব্লাডব্যাঙ্কের প্রধান বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কথায়, “কিট সঠিক সময়ে কেনার কথা বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত, কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারলাম না। হাওড়া হাসপাতালে গত ২ মাস ভাল রক্ত সংগ্রহ হয়েছে। ফলে কিট বেশি লাগছে। এ রকম হলে কোনও ব্লাডব্যাঙ্ক আর রক্ত সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করবে না।” এন আর এসের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান মলয় ঘোষও বিষয়টি শুনে অবাক হয়ে বলেন, “রক্ত সংগ্রহের পরে বাধ্যতামূলক ৫টি পরীক্ষা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে না-করে রেখে দেওয়া হয়েছে, এমন কখনও শুনিনি।” মেডিক্যালের ‘ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন’-এর প্রধান উৎপল চৌধুরী জানান, হয়তো রক্ত সংগ্রহের ৭২ ঘণ্টা পরেও পরীক্ষা হয়নি, কিন্তু ব্লাডব্যাঙ্কে সঠিক তাপমাত্রায়, বিধি মেনে রক্ত রাখা আছে, তা হলে অনেক সময়ে দেরি হলেও রিপোর্ট ঠিক আসতে পারে। কিন্তু তার তো নিশ্চয়তা নেই। স্যাক্সের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর রূপেন্দ্র চৌধুরী এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। আর স্বাস্থ্য দফতরের সদ্য নিযুক্ত মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস জানান, বিষয়টি তাঁরা দেখছেন। কাজ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই ৪১১ ইউনিট রক্ত পরীক্ষা করে রোগীদের দেওয়া হবে কি না, সিদ্ধান্ত হয়নি। |