দলের দীর্ঘদিনের শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বৃহস্পতিবার মহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একাংশের মতে, ডানা ছাঁটলেও বর্ষীয়ান বিধায়ক শোভনদেববাবুকে তিনি এখনও যে ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন, তা বোঝাতেই মমতার ওই বৈঠক। বুধবারই শোভনদেববাবুকে সরিয়ে দলের শ্রমিক সংগঠনের (আইএনটিটিইউসি) সর্বভারতীয় সভাপতির পদে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এসেছেন মমতা। স্বভাবতই ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়েছিলেন শোভনদেববাবু। কিন্তু এ দিনের বৈঠকের পর পরিস্থিতির সামান্য ‘উন্নতি’ হয়েছে বলেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অনুমান। তৃণমূল সূত্রের খবর, একটি ‘সম্মানজনক সমাধান সূত্রের’ খোঁজ চলছে। আজ, শুক্রবার তা প্রকাশ্যে আসতে পারে।
এ দিনের বৈঠক নিয়ে শোভনদেববাবু বিশদে কোনও মন্তব্য করেননি। কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু শোভনদেববাবু ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে নিয়ে মহাকরণ ছেড়ে বেরোনোর সময়ে মমতাকে যথেষ্ট ‘প্রসন্ন’ দেখিয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, সংগঠনে রদবদলের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না-করতে শোভনদেববাবুকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন দুপুরেই ফোনে শোভনদেববাবুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথাবার্তা হয়। তিনি চল্লিশ বছর শ্রমিক সংগঠনের কাজ করছেন এবং সেই কাজই করে যাতে চান বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান শোভনদেববাবু। এর পরেই মমতা তাঁকে বিকেলে মহাকরণে আসতে বলেন। রাজ্য বিধানসভার সরকারি পক্ষের মুখ্যসচেতক শোভনদেববাবু পরে বলেন, “বিধানসভার বাজেট অধিবেশন এবং সরকারি কিছু কর্মসূচি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়।” এক ঘণ্টারও বেশি সময় দু’জনের কথা হয়। বৈঠকের শেষ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান ববি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই গাড়িতে শোভনদেববাবু ও ববি কালীঘাটে যান। সেখানেও তিন জনে কিছু ক্ষণ আলোচনা করেন।
দলের শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে শোভনদেববাবুর মতো বর্ষীয়ান নেতাকে সরানো নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরে ঈষৎ ‘অস্বস্তি’ তৈরি হয়েছে বলেই দলীয় সূত্রের খবর। বিশেষত, সংগঠনের রাজ্য সংগঠনের ভার শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দোলা সেনের হাতে রয়ে যাওয়ায় এবং তাঁদের নেতাকে সরানোয় শোভন-অনুগামীরা ‘ক্ষুব্ধ’। দলের অন্দরে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘টানাপোড়েন’ শুরু হয়েছে। সেই ‘অস্বস্তিকর পরিস্থিতি’ দূর করার প্রক্রিয়াই এ দিনের বৈঠকে শুরু হল বলে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ধারণা। |