পাচারকারী এবং বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে গ্রাম ঘিরে ব্যাপারে উদ্যোগী হল বনগাঁ মহকুমা প্রশাসন।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর সুটিয়া সীমান্ত দিয়ে চলে গরুপাচার। তার জেরে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এদেশে ঢুকে পড়ছে যখন তখন। এখান থেকে গরু নিয়ে ফিরে যাচ্ছে ও পারে। সীমান্ত দিয়ে এ ভাবে গরু নিয়ে যাওয়ার ফলে খেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে। পাচারে বাধা দিলে বাংলাদেশি পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী থেকে বিএসএফ জওয়ানদেরও। সমস্যার সমাধানে এ বার সুটিয়া সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে উদ্যোগী হয়েছে মহকুমা প্রশাসন।
বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই সীমান্ত দিয়ে পাচারকারী, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের ঢোকা বন্ধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যভাবে সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।”
বনগাঁ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, সুটিয়া সীমান্তে ৯০০ মিটার এলাকা জুড়ে কাঁটাতরের কোনও বেড়া নেই। ওই এলাকায় কোদালিয়া নদী দু’দেশের সীমান্ত ভাগ করে দিয়েছে। সম্প্রতি গরু পাচারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি গণ্ডগোল হয়েছে। এতদিন ওই সীমান্ত দিয়ে গরপাচার চললেও গ্রামবাসীদের একাংশ কাঁটাতারে বেড়া দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করতেন। কারণ গ্রামবাসীদের অনেকেই গরু পাচারে ‘মিডলম্যান’ হিসাবে কাজ করে টাকা রোজগার করত। |
সুটিয়া সীমান্তে কাঁটাতোরের বেড়াহীন এই কোদালিয়া নদীই পাচারকারীদের স্বর্গ। নিজস্ব চিত্র |
প্রশাসনের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি পাচারকারীরা সরাসরি এ দেশে ঢুকে গরু নিয়ে ওপারে চলে যাচ্ছে। ফলে এখানকার যারা ওই কাজে জড়িত ছিল তাদের রুটি-রুজিতে টান পড়েছে। তা ছাড়া গ্রামবাসীরা গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এসে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর, দোকান ভাঙচুর করে। তাদের হাতে মার খেয়ে কেয়কজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এমনকী বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পাননি বিএসএফ জওয়ানেরাও। তাঁদেরও মারধর করা হয়। গ্রামবাসীরা জানান, জওয়ানেরা গুলি না চালানোয় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের ‘সাহস’ বেড়ে গিয়েছে। এলাকায় একটি পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও তারা ওই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে ‘ব্যর্থ’।
এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দারা চাইছেন কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হলে দু’দেশের সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ওই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে গেলে বহু দিন চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই নির্দিষ্ট ১৫০ গজ ছেড়ে কাঁটাতারের ওই বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মহকুমা প্রশাসন। যদিও কোদালিয়া নদীর পাড় বরাবার কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হত। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় ১৫০ গজের বাইরে দিয়েই বেড়া দেওয়া ঠিক হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই সব এলাকায় বসবাসকারী বেশ কিছু পরিবারকে পুনর্বাসন দিতে হবে।
সম্প্রতি মহকুমাশাসকের দফতরে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, পুলিশ, বিএসএফ এবং সিপিডব্লুডি (সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপোর্টমেন্ট)-র প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে জিরো পয়েন্ট থেকে দেড়শো গজ ছেড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ওই কাজের জন্য ১৩০টি পরিবরকে পুনর্বাসন দিতে হবে। সঞ্জয়বাবু বলেন, “কাঁটাতারের ভিতরে যাঁদের বাড়ি-ঘর পড়ে যাবে তাঁরা চাইলে তাঁদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যাঁরা আসতে চাইবেন না, তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কাঁটাতারের বেড়া বরাবর কয়েকটি গেট তৈরি করা হবে।”
তবে ১৫০ গজের ভিতরে যাঁরা বসবাস করছেন এমন অনেকে সরকারি জমি দখল করে রয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি। গত সোমবার প্রশাসনের তরফে এক প্রতিনিধি দলওই এলাকায় গিয়ে জমি চিহ্নিত করে এসেছেন। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন দত্ত বলেন, “পুনর্বাসনের জন্য মোট ৭ একর জমি প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত ৩ একর জমি পাওয়া গিয়েছে। বাকি জমির খোঁজ চলছে।” তাঁর দাবি, “পাচারকারী এবং বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে কাঁটাতারের বেড়া দিতেই হবে। গ্রামবাসীদের বোঝানা হচ্ছে।”
সঞ্জয়বাবু বলেন, “সিপিডব্লুডি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ করবে। অর্থের সমস্যা হবে না। জমি অধিগ্রহণের জন্য সিপিডব্লুডি-র তরফে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানানো হবে।” |