স্কুল-সংলগ্ন মাঠে দোকান তৈরি করা নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে গোলমালের সূত্রপাত। যার জেরে এক পক্ষ ওই মাঠে কলাগাছের চারা পুঁতে দেয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে স্কুলের ভিতরেও। মাঠের ‘অপব্যবহার’-এর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষক ও পরিচালন কমিটির সদস্যদের ঘেরাও করে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশ। ঘেরাও করা হয় পুলিশকেও। রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার সফিরাবাদ শ্যামাচরণ ঘোষ হাইস্কুলে। এ দিন ছিল স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়ানুষ্ঠান। গোলমালের জেরে সে সবও পণ্ড হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্যকুমার বিশ্বাস বলেন, “ওই মাঠটি স্কুলকে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন গ্রামেরই কয়েক জন। মাঠ-সংলগ্ন পূর্ত দফতরের জমিতে চারটি দোকান আছে। আরও একটি দোকান বানানোর হয়। তারই প্রতিবাদ করেন জমিদাতারা। তাঁদের বক্তব্য, জমি দেওয়া হয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য। সেখানে অন্যেরা ব্যবসা করবে কেন? আর যদি ওই জমিতে কেউ দোকান করে, তা হলে জমিদাতাদেরও দোকান তৈরির অধিকার আছে।”
এরই প্রতিবাদে জমিদাতারা মাঠে কলাগাছের চারা পুঁতে দেন। তাতে ক্ষোভ ছড়ায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও। ছাত্রছাত্রী এবং গ্রামবাসীদের একাংশ ঘেরাও করেন।
ভাঙা দোকানঘর। |
এ দিন ছিল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। মাঠে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল। মাইক লাগানো হয়েছিল। মাঠে চুন ফেলে দাগ টানা-সহ প্রতিযোগিতার জন্য আরও আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেরে ফেলেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়া এবং গ্রামবাসীদের অনেকে এসে দেখেন, সেই মাঠেই গাছের চারা পোঁতা হয়েছে। তা দেখে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ গেলে তাদেরও ঘেরাও করা হয়। প্রধান শিক্ষকের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অবিলম্বে মাঠ পরিষ্কার করে, দোকান ভেঙে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষকে। পুলিশ তাতে রাজি না হওয়ায় বিক্ষোভকারীরা নিজেরাই চারা তুলে ফেলেন মাঠ থেকে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ইটের গাঁথনির দোকানঘরটি।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে মাঠটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে ব্যবহারের দিয়েছিলেন গ্রামের কয়েক জন। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রয়োজনেই ওই জমিতে স্থানীয় কয়েকটি দোকান তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে সেখানে আরও কয়েকটি দোকান হয়। সম্প্রতি সেখানে সুনীল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি দোকান তৈরি শুরু করলে তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাধে।
জমিদাতাদের এক জন তাপস ঘোষ বলেন, “লিখিত ভাবে না হলেও স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য আমরা মাঠ দিয়েছি। ওই জমিতে অন্য কেউ যদি ব্যবসা করে, তা হলে আমরা দোকান করলে তাতে আপত্তি কোথায়? দু’চার দিনের মধ্যে সমস্ত দোকান না ভাঙলে সব দোকান ভেঙে দেওয়া হবে।” জমিদাতাদের আর এক জন মঞ্জুরানি ঘোষের কথায়, “স্কুল কর্তৃপক্ষকে বার বার বলা হচ্ছে, বাচ্চাদের খেলার মাঠের সামনে যেন অবৈধ দোকান না করা হয়। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। তারই প্রতিবাদে মাছে চারা পুঁতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।”
প্রধানশিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ। |
স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি আলতাপ হোসেন এবং সম্পাদক নিতাইচরণ মণ্ডল বলেন, “জমির মালিকদের সঙ্গে আমরাও সহমত পোষণ করছি। তবে আমাদের দায়িত্ব পাওয়ার অনেক আগে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সুবিধার জন্য তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষক কয়েকটি দোকান বসিয়েছিলেন। এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। আগেও এক বার দোকান ভাঙা হয়েছিল। স্কুল জমির মালিক হলে তবেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।” অন্য দিকে, একটি দোকানের মালিক পরিমল দাসের বক্তব্য, “তিরিশ বছর আগে আমাদের বসানো হয়। এখন দোকান তুলে দিলে পরিবার নিয়ে না খেতে পেয়ে মরতে হবে। নতুন কোনও জায়গা দিলে তবেই দোকান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।”
স্কুলের ছাত্র, অভিভাবকদের পক্ষে সুকুমার সরকার, প্রদীপ সরকার, মৌমিতা ঘোষেরা বলেন, “মাঠের সৌন্দর্য্যায়নের পক্ষে দোকানগুলি বেমানান। তা ছাড়া, এ ভাবে অবৈধ নির্মাণ হতে দিলে তো এক সময় গোটা মাঠটাই দখল হয়ে যাবে। তাই প্রতিবাদ জানাতে আন্দোলনে নামা।”
|