বিয়েবাড়িতে ব্যস্ত বাস, বিক্ষোভ
ন্ধে পেরিয়ে রাত নামতেই রাস্তা একেবারে শুনসান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেও বাসের দেখা নেই। বিয়ের মরশুম শুরু হতে না হতেই বাসের অভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। অভিযোগ, সন্ধ্যে নামলেই বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া খাটতে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটের বাস।
বুধবার সন্ধ্যের পর থেকে একাধিক রুটের বাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা প্রায় আধঘণ্টা কৃষ্ণনগরের বেলডাঙা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। নিত্যযাত্রীদের মধ্যে রতন মল্লিক বলেন, “সন্ধে সাতটা থেকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। একটাও বাস নেই। রাত সাড়ে আটটার সময়ও স্ট্যন্ডে প্রায় শ’তিনেক যাত্রী দাড়িয়ে।” যাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে আসে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বাস মালিকেরা একটা বাস চালাতে রাজি হন। সেই বাসটিও বেলডাঙা মোড়ে গিয়ে খারাপ হয়ে যায়। জানানো হয়, অতিরিক্ত যাত্রীর জন্যই বাস থারাপ হয়ে গিয়েছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বেলডাঙা মোড় অবরোধ করেন। রাহুলবাবু বলেন, “প্রশাসনের চরম উদাসীনতার জন্যই দিনের পর দিন যাত্রীরা এই ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।” পরে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে কৃষ্ণনগর-রানাঘাট ভায়া শান্তিপুর রুটের দু’টি বাস চালু করা হয় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ। এর পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, বিয়ের দিনগুলো তো আছেই এ ছাড়া অন্য দিনেও মাঝে মধ্যেই বাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে মোটর ভ্যানই ভরসা। আর রাত বাড়লে নিত্যযাত্রীদের লরি বা ছোট মালবাহী গাড়িতে করে বাড়ি ফেরা ছাড়া উপায় থাকে না। নদিয়া জেলা নিত্যবাসযাত্রী সমিতির সভাপতি রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা বারবার জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। বাস মালিকদের কাছে অনুরোধও করেছি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দিনের পর দিন বাস মালিকেরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো বাস চালাচ্ছেন।” তাঁর অভিযোগ, “সন্ধ্যের পর থেকেই অনেক রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়। আর বিয়ের দিনগুলোতে তো কোনও কথাই নেই।”
নদিয়া জেলায় বর্তমানে ৫৯টি রুটে ৬১৩টি বাস চলে। বুধবার তার মধ্যে ২৮০টি বাস বিয়ে বাড়ির কাজে ভাড়া খাটতে চলে যাওয়ায় সারাদিন ধরেই নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। কৃষ্ণনগর-রানাঘাট ভায়া শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর-কালনাঘাট ভায়া শান্তিপুরএই দুই রুটে মোট বাস চলে ৩৬টি। গত কাল তার মধ্যে ১১টা গাড়ি চলেনি। ৪টি বাস কয়েক দিন ধরেই খারাপ। বাকী সাতটা বাস বিয়েবাড়ির ভাড়া খাটতে চলে যায়। সন্ধের পরে তা চরম আকার নেয়। যাত্রীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে কোনও রকম নোটিশ ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বাসের মালিকেরা। গত এক বছরে মাজদিয়া রুটে দু’দিন, হাঁসখালি রুটে এক দিন, ধর্মদা রুটে ৬ দিন, শান্তিপুর রুটে টানা সাত দিন এবং নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুর উপর দিয়ে চলা ১৪টি বাস দু’দিন বন্ধ করে রেখেছিল বাস মালিক ও শ্রমিকেরা। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক পীযুষ রক্ষিত বলেন, “আমরা সংগঠনগত ভাবে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না। অনুরোধ করতে পারি মাত্র। ওরা আমাদের কিছু না জানিয়েই বিয়ের কাজ করতে চলে যান। নিয়ম অনুসারে বিয়ের কাজে যেতে হলে আরটিও-র অনুমোদন দরকার। কিন্তু বাস মালিকেরা কোনও অনুমতি না নিয়েই অন্য জায়গায় কাজ করতে চলে যান। সংগঠনের সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “আমরা আরটিও-কে বার বার বলেছি যে বিয়ের দিনগুলোতে জেলার বিভিন্ন রাস্তায় বিয়েবাড়ির বাসগুলির সঠিক অনুমোদন রয়েছে কী না তা দেখা হোক। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তা করা হলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।” আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মলয় রায় বলেন, “বৃহস্পতিবারই আমি মালিক সংগঠনের লোকেদের ডেকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এর পরে যাত্রীরা যাতে আর কোনও ভাবে নাকাল না হন তা দেখা হবে। যদি কোনও বাস অনুমোদন ছাড়া বিয়েবাড়ির কাজ করে তবে সেক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুমতিপত্র পরীক্ষার জন্য এনভিআই কর্মীকে রাস্তায় নামানো হবে।” জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “বাসের অভাবে যাত্রীদের এই অসুবিধা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ বার থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.