|
|
|
|
শিবিরে ধান বিক্রির আশায় কৃষক, ফের আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শালবনি |
সরকারি সহায়ক-মূল্য পাওয়ার আশায় পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও অনেক চাষির ঘরে মজুত রয়েছে ধান। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, ধান বেচবেন কী করে? ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে চালকলে বেচতে গেলে আরও খরচ। লাভের মুখ দেখাই যাবে না। তাই চাষিদের দাবি, এলাকা-ভিত্তিক শিবির হোক।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এসেছিলেন জেলায়। ধান কেনায় গতি আনতে প্রশাসনের সঙ্গে এ দিন ফের বৈঠক করেন মন্ত্রী। মেদিনীপুর শহরের কেরানিতলা, শালবনির পিরাকাটা ও সদর ব্লকের চাঁদড়ায় ধান কেনার শিবিরেরও আয়োজন হয়েছিল মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে। তিনটি শিবিরেই যান মন্ত্রী। পিরাকাটার শিবিরেই মন্ত্রী ঘোষণা করেন, “এলাকা-ভিত্তিক শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়েই ধান কেনা হবে। গ্রামের চাষিরা আলোচনা করে ধান বিক্রির কথা বিডিও, জেলা খাদ্য নিয়ামক বা চালকল মালিককে জানান। তাঁরাই শিবিরের ব্যবস্থা করবেন।”
বস্তুত, সদর ব্লকের চাঁদড়া, ধেড়ুয়ার চাষিদেরও ধান বিক্রি করতে হলে মেদিনীপুর শহরের চালকলেই আসতে হয়। শালবনির পিরাকাটা বা সাতপাটির কৃষককেও যেতে হয় মেদিনীপুর বা চন্দ্রকোনা রোডে। পিরাকাটা থেকে মেদিনীপুরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ধেড়ুয়া থেকেও ২৫ কিলোমিটার। |
|
পিরাকাটায় ধান কেনার শিবিরে খাদ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
পরিবহণ খরচ, গাড়িতে ধান তোলা-নামানোতেও বিস্তর খরচ। সে হ্যাপা সামলাতে হলে লাভ তো থাকেই না, উল্টে লোকসান। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষিদের সমস্যা আরও বেশি। আগের দু’দিন পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় একই সমস্যার কথা শুনে মন্ত্রী যা জানিয়েছিলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরেও সেই একই নিদান দিলেন, অর্থাৎ শিবিরের। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই নভেম্বরের মাঝামাঝি ধান কেনার কথা ঘোষণা করেও কেন ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি পৌঁছেও আশ্বাসই সার হচ্ছে! কেন এর মধ্যেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিবির করা হল না?
মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, আগামী বুধবারের মধ্যেই জেলাশাসক ও মহকুমাশাসক প্রত্যেক বিডিওকে নিয়ে বৈঠক করবেন। কোন এলাকায় কবে শিবির হবে তার দিনক্ষণও ঠিক করবেন। যে এলাকায় যেদিন শিবির হবে তার তিন দিন আগে থেকে সেই এলাকায় প্রচার হবে। মন্ত্রীর কথায়, “এত দিন টাকার সমস্যা থাকায় সব সংস্থা ধান কেনায় নামতে পারেনি। এ বার টাকার ‘ফ্লো’ বেড়েছে। আর সমস্যা হবে না।” ধান কেনার সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার পরিকল্পনা করেছে বলেও মন্ত্রী জানান। যার মধ্যে রয়েছে ব্লকে-ব্লকে চালকল ও গুদাম তৈরি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ২ লক্ষ ৯ হাজার টন। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্রা ৫৫ হাজার ৮৭৯ টন! এর থেকেই পরিষ্কার, ধানও কেনা হয়েছে নিতান্তই কম। শালবনির ধামাকাটা গ্রামের বাসন্তী বেতাল বলেন, “খাবার ধান রেখেও প্রতি বছর প্রায় ৬০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করি। এ দিন শিবির হওয়ায় ৩০ কুইন্টাল ধান বিক্রির জন্য এনেছি। এত দিন শিবির হয়নি বলে বিক্রি করতে পারিনি।” বাঘেরপুকুরের মোহন হাঁসদা বলেন, “আমাদের গ্রামেও শিবির হওয়ার কথা রয়েছে। তখন বিক্রি করব বলে এখনও ধান তুলে রেখেছি।”
অন্য দিকে, জঙ্গলমহলের রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে আরও ৬টি জায়গা থেকে রেশন দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, “এ বার আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ-পিছু রেশন দোকান করা হবে। একটি গ্রামে ৫ হাজার মানুষের বসবাস থাকলে গ্রামে অন্তত ২টি রেশন দোকান থাকবে।” |
|
|
|
|
|